পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭২
ভারতবর্ষ।

সভ্যতায় প্রাণসঞ্চার করিয়াছিল, তাহা যেন রিক্ত নিঃশেষিত হইয়া গেল; আর কোন নূতন শক্তি আসিয়া তাহাকে বলদান বা তাহার স্থান অধিকার করিল না।

 অপরপক্ষে, ভারতবর্ষে ও ইজিপ্টেও সভ্যতার মূলভাব এক বটে, কিন্তু সমাজকে তাহা অচল করিয়া রাথিল। তাহার সরলতায় সমস্ত যেন একঘেয়ে হইয়া গেল। দেশ ধ্বংস হইল না, সমাজ টিঁকিয়া রহিল, কিন্তু কিছুই অগ্রসর হইল না, সমস্তই একজায়গায় আসিয়া বন্ধ হইয়া গেল।

 প্রাচীন সভ্যতামাত্রেই একটা না একটা কিছুর একাধিপত্য ছিল। সে আর কাহাকেও কাছে আসিতে দিত না, সে আপনার চারিদিকে আটঘাট বাঁধিয়া রাখিত। এই ঐক্য, এই সরলতার ভাব সাহিত্যে এবং লোকসকলের বুদ্ধিচেষ্টার মধ্যেও আপন শাসন বিস্তার করিত। এই কারণেই প্রাচীন হিন্দুর ধর্ম ও চারিত্র গ্রন্থে, ইতিহাসে কাব্যে সর্ব্বত্রই একই চেহারা দেখিতে পাওয়া যায়। তাহাদের জ্ঞানে এবং কল্পনায়, তাহাদের জীবনযাত্রায় এবং অনুষ্ঠানে, এই একই ছাঁদ। এমন কি, গ্রীসেও জ্ঞানবুদ্ধির বিপুলব্যাপ্তিসত্ত্বেও তাহার সাহিত্যে ও শিল্পে এক আশ্চর্য্য একপ্রবণতা দেখা যায়।

 য়ুরোপের আধুনিক সভ্যতা ইহার সম্পূর্ণ বিপরীত। এই সভ্যতার উপর দিয়া একবার চোখ বুলাইয়া যাও, দেখিবে, তাহা কি বিচিত্র, জটিল এবং বিক্ষুব্ধ। ইহার অভ্যন্তরে সমাজতন্ত্রের সকল রকম মূলতত্ত্বই বিরাজমান; লৌকিক এবং আধ্যাত্মিক শক্তি, পুরোহিততন্ত্র, রাজতন্ত্র, প্রধানতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র, সমাজ-পদ্ধতির সকল পর্য্যায়, সকল অবস্থাই, বিজড়িত হইয়া দৃশ্যমান; স্বাধীনতা, ঐশ্বর্য্য এবং ক্ষমতার সর্ব্বপ্রকার ক্রমান্বয় ইহার মধ্যে স্থান গ্রহণ করিয়াছে। এই বিচিত্রশক্তি স্থির নাই, ইহারা আপনা-আপনির মধ্যে কেবলি লড়িতেছে। অথচ