পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৭৮
ভারতবর্ষ

তাহা রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে আবশ্যকের অনুরোধে বর্জ্জনীয় এ কথা একপ্রকার সর্ব্বজনগ্রাহ্য হইয়া উঠিতেছে। রাষ্ট্রতন্ত্রে মিথ্যাচরণ, সত্যভঙ্গ, প্রবঞ্চনা, এখন আর লজ্জাজনক বলিয়া গণ্য হয় না। যে-সকল জাতি মনুষ্যে মনুষ্যে ব্যবহারে সত্যের মর্যাদা রাখে, ন্যায়াচরণকে শ্রেয়োজ্ঞান করে, রাষ্ট্রতন্ত্রে তাহাদেরও ধর্ম্মবোধ অসাড় হইয়া থাকে। সেইজন্য ফরাসি, ইংরাজ, জর্ম্মাণ, রুশ, ইহারা পরস্পরকে কপট, ভণ্ড, প্রবঞ্চক, বলিয়া উচ্চস্বরে গালি দিতেছে।

 ইহা হইতে এই প্রমাণ হয় যে, রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে য়ুরোপীয় সভ্যতা এতই আত্যন্তিক প্রাধান্য দিতেছে যে, সে ক্রমশই স্পর্ধিত হইয়া ধ্রুবধর্ম্মের উপর হস্তক্ষেপ করিতে উদ্যত হইয়াছে। এখন গত শতাব্দীর সাম্য-সৌভ্রাত্রের মন্ত্র য়ুরোপের পরিহাসবাক্য হইয়া উঠিয়াছে। এখন খ্রীস্টান্‌ মিশনারিদের মুখেও ‘ভাই'কথার মধ্যে ভ্রাতৃভাবের সুর লাগে না।

 জগদ্বিখ্যাত পরিহাসরসিক মার্কটোয়েন গত ফেব্রুয়ারি মাসের ‘নর্থ আমেরিকান রিভিয়ু’ পত্রে ‘তিমিরবাসী ব্যক্তিটির প্রতি’ (To The person sitting in darkness) নামক যে প্রবন্ধ লিখিয়াছেন, তাহা পাঠ করিলে আধুনিক সভ্যতার ব্যাধিলক্ষণ কিছু কিছু চোখে পড়িবে। তীব্র পরিহাসের দ্বারা প্রখরশাণিত সেই প্রবন্ধটি বাঙলায় অনুবাদ করা অসম্ভব। লেখাটি সভ্যমণ্ডলীর রুচিকর হয় নাই; কিন্তু শ্রদ্ধেয় লেখক স্বার্থপর সভ্যতার বর্ব্বরতার যে-সকল উদাহরণ উদ্ধৃত করিয়া দিয়াছেন, তাহা প্রামাণিক। দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার এবং হানাহানি-কাড়াকাড়ির যে চিত্র তিনি উদ্ঘাটন করিয়াছেন, তাহার বিভীষিকা তাঁহার উজ্জ্বল পরিহাসের আলোকে ভীষণরূপে পরিস্ফুট হইয়াছে।

 রাষ্ট্রীয় স্বার্থপরতা যে য়ুরোপের সাহিত্য ও ধর্ম্মকে ক্রমশ অধিকার করিতেছে তাহা কাহারও অগোচর নাই। কিপ্লিং এক্ষণে ইংরাজি