পাতা:ভারতবর্ষ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৮৭
বারােয়ারি-মঙ্গল।

কলের মধ্যে ধরিয়া রাখিতে গিয়া মারিয়া ফেলিয়াছি, য়ুরোপ স্বার্থোন্নতিকে বলপূর্ব্বক চাপিয়া রাখিতে গিয়া প্রত্যহই বিনাশ করিতেছে।

 অতএব, আমাদের প্রাচীনসমাজ আজ নিজের মঙ্গল হারাইয়াছে, দুর্গতির বিস্তীর্ণ জালের মধ্যে অঙ্গে-প্রত্যঙ্গে জড়ীভূত হইয়া আছে, ইহা প্রত্যক্ষ দেখিতেছি বটে; তবু বলিতে হইবে, মঙ্গলকেই লাভ করিবার জন্য ভারতবর্ষের সর্ব্বাঙ্গীণ চেষ্টা ছিল। স্বার্থসাধনের প্রয়াসই যদি স্বভাবের সহজ নিয়ম হয়, তবে সে নিয়মকে ভারতবর্ষ উপেক্ষা করিয়াছিল। সেই নিয়মকে উপেক্ষা করিয়াই যে তাহার দুর্গতি ঘটিয়াছে, তাহা নহে; কারণ, সে নিয়মের বশবর্তী হইয়াও গুরুতর দুর্গতি ঘটে—কিন্তু সমাজকে সকল দিক্‌ হইতে মঙ্গলজালে জড়িত করিবার প্রবল চেষ্টায় অন্ধ হইয়া, সে নিজের চেষ্টাকে নিজে ব্যর্থ করিয়াছে। ধৈর্য্যের সহিত যদি জ্ঞানের উপর এই মঙ্গলকে প্রতিষ্ঠিত করিবার চেষ্টা করি, তবে আমাদের সামাজিক আদর্শ সভ্য জগতের সমুদয় আদর্শের অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হইবে। অর্থাৎ আমাদের পিতামহদের শুভ ইচ্ছাকে যদি কলের দ্বারা সফল করিবার চেষ্টা না করিয়া জ্ঞানের ধারা সফল করিবার চেষ্টা করি, তবে ধর্ম্ম আমাদের সহায় হইবেন।

 কিন্তু কল-জিনিষটাকে একেবারে বর্‌খাস্ত করা যায় না। এক এক দেবতার এক এক বাহন আছে—সম্প্রদায়দেবতার বাহন কল। বহুতর লোককে এক আদর্শে গঠিত করিতে গেলে বোধ করি বারো-আনা লোককে অন্ধ অভ্যাসের বশবর্তী করিতে হয়। জগতে যত ধর্ম্মসম্প্রদায় আছে, তাহাদের মধ্যে সজ্ঞান নিষ্ঠাসম্পন্ন লোক বেশি পাওয়া যায় না। খ্রীষ্টানজাতির মধ্যে আন্তরিক খ্রীষ্টান কত অল্প, তাহা দুর্ভাগ্যক্রমে আমরা জানিতে পাইয়াছি। এবং হিন্দুদের মধ্যে অন্ধসংস্কারবিমুক্ত যথার্থ জ্ঞানী হিন্দু যে কত বিরল, তাহা আমরা চিরাভ্যাসের জড়তাবশত ভাল করিয়া জানিতেও পাই না। সকল লোকের প্রকৃতি যখন