পাতা:ভারতীয় স্মৃতি কথা ও চিত্র - সমরেন্দ্রচন্দ্র দেববর্মণ.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বল্লভণী গড় క এই মন্দির ও রন্ধনাদি কার্য্যে ব্যবহৃত দুইটী পর্ণকুটার ব্যতিরেকে এই স্থানে আর অন্য লোকালয় নাই। দেবীপূজকগণের নিকট জানা যায় যে, প্রায়শঃ সন্ধ্যার পরক্ষণেই এই অরণ্যসস্কুল গিরিশিখর হইতে ব্যাস্ত্ৰাদি হিংস্র জন্তু বহির্গত হইয়া চতুৰ্দ্দিকে উপদ্রব করে, এবং সুযোগ প্রাপ্ত হইলেই নিকটবর্তী পল্লীবাসিগণের পালিত পশু হনন পূর্বক নিবিড় অরণ্যে লইয়া যায়। এই জন্য জীবনাশঙ্কায় পূজারিগণ সূৰ্য্যাস্তের প্রাক্কালেই পূজাদি সমস্ত কাৰ্য্য সম্পাদন পূর্বক মন্দিরদ্বার রুদ্ধ করিয়া বরুণী পৰ্ব্বত হইতে প্রায় অৰ্দ্ধ ক্রোশ দূরবর্তী তাহাদিগের গ্রামে গমন করে। প্রতি বৎসর জ্যৈষ্ঠ মাসের সংক্রান্তিতে এই স্থানে তিন দিবস ব্যাপী জনাকীর্ণ এক মেলা হয় । তদুপলক্ষে তৎকালে বহু ছাগ বলিদান পূৰ্ব্বক দেবীদ্বয়ের ষোড়শোপচারে পূজা হইয়া থাকে। এই অঞ্চলের ব্রাহ্মণগণকে ভুবনেশ্বর, পুরী ও সাক্ষীগোপালের পাণ্ডাদিগের ন্যায় ভিক্ষার্থী অর্থলোভী উত্যক্তকারী বলিয়া মনে হইল না , সাধারণ লোকেও ঐ সকল অঞ্চলস্থ লোকের ন্যায় ভিক্ষাবৃত্তি ও অন্যান্য নীচ প্রবৃত্তির কার্য্য না করিয়া কৃষিকৰ্ম্মাদি দ্বারা নিৰ্ব্বিবাদে জীবনযাত্রা নিৰ্ব্বাহ করে । বরুণী পৰ্ব্বতে অনেকগুলি গুহা আছে । তন্মধ্যে পাণ্ডব নামে খ্যাত গুহাটী সৰ্ব্বাপেক্ষা বৃহৎ । ইহাতে শতাধিক লোক থাকিতে পারে। এইরূপ জনশ্রুতি আছে যে উক্ত গুহাসমূহে সংসারত্যাগী যোগী-ঋষিগণ ভগবচ্চিন্তায় দিনযাপন করিতেন। র্তাহাদিগের দ্বারা শিলাগাত্রে উৎকীর্ণ নানা যুগের নানাবিধ লিপি অদ্যাপি বর্তমান রহিয়াছে। তন্মধ্যে তিন খানি প্রাচীন কালের কুটিলাক্ষরে লিখিত। মকরধ্বজ নামক জনৈক যোগীর লিপিখানি নবম শতকের। কিন্তু ঐ নবম শতক কোন সনের তাহার নির্দেশ নাই। উহা চেদী সন হইতে পারে বলিয়া সম্ভাবিত হয়। এতদ্ব্যতিরেকে ঐ স্থানে আর একটা ৭৮০ সংবতের লিপি উৎকীর্ণ রহিয়াছে। গুহ সমূহ অধুনা ব্যাঘ্ৰাদি হিংস্র জন্তু কর্তৃক প্রায়শঃ অধিকৃত হইয়া থাকে ; এজন্য লোকে সচরাচর তথায় যাইতে সাহস করে না ।