পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২ e "ডিবৃটি-সাবের গাড়ীবারাওয়ে আসিয়া অসম্ভব দুঃসাহসিকতা ও আম্পৰ্দ্ধার পরিচয় দিয়াছে, এবং পুনঃ পুনঃ বলা-কহা সত্ত্বেও এ স্থান ত্যাগ করিতেছে না । ‘প্রখর রবির তাপ’ ও ‘রবিতপ্ত বালুর কথা, আমার চট্‌ করিয়া মনে পড়িয়া গেল । চাপরাশিকে ভৎসনা করিয়া বৃদ্ধাকে কহিলাম, “ওখানে বৃষ্টির ঝাট আসছে, . তুমি উঠিয়া এই বারাণ্ডায় বস। বৃষ্টি থামিলে যেয়ে ” বৃদ্ধ গদগদকণ্ঠে আশীৰ্ব্বাদ করিল, “বেঁচে থাকো বাবা ! বুড়ো মানুষ—তায় কদিন ধরে জর হচ্ছে ! এই বৃষ্টিতে বড় কঁাপিয়ে দিলে। কাছে কোথাও একটু দাড়াবার জায়গা নাই বলে, এখানে একটু বসেছি, বাব!” একটা করুণ সহানুভূতিতে আমার হৃদয় পূর্ণ হইয়া উঠিল। ডেপুটিগিরিতে তখনে৷ পাকা হই নাই, পুথির কথাগুলা, সুতরাং, একেবারে ভুলি নাই। আমি কহিলাম, “জর ! তাহলে এই বর্ষায় বেরিয়ে ত ভালো করনি, বাপু, আমি একখান কম্বল দিচ্ছি— সেইটে. মুড়ি দিয়ে এইখানেই আজ পড়ে থাকে। কাল সকালে বাড়ী যেয়ে !” বৃদ্ধার চোখে, বোধ হয়, জল আসিয়াছিল। রুদ্ধস্বরে, সে কহিল, “গরিবের প্রতি তোমার এত দয়া । ভগবান তোমার ভালো করবেন, বাবা । চিরদিন আমার এমন দুঃখ-দুর্দশ ছিল না ।” কথাটা বিশ্বাসযোগ্য ! কারণ তার কণ্ঠ স্বর সাধারণ ভিখারিণীর মত নহে! বৃদ্ধার্কে একখানি কম্বল ও শুষ্ক বস্ত্র আনাইয়া দিলাম । ভোজন-শেষে, আবার বায়াওtয় অসি ভারতী । জ্যৈষ্ঠ, ১৩১৭ লাম। তখনে বৃষ্টি পড়িতেছিল। আমি কহিলাম, “একটু দুধ খাবে?” বুদ্ধা কোন উত্তর দিল না । বেহারাকে দুধ আনিতে বলিলাম। জিজ্ঞাসা করিলাম, “তোমার বাড়ী কি, এ দেশেই ?” “ই, বাবা !” তাহার পর, পরিচয়ে জানিলাম, সে ব্রাহ্মণকস্তা। তার পিতা গ্রামের পৌরোহিত্য করিয়া বেশ সুখ-স্বচ্ছনোই দিন কাটাইয়া গিয়াছে। ৰাল্যে মাতৃহীন হইলেও, পিতার মেছে, সে অভাব তাঁহাকে একদিনের জন্তও অনুভব করিতে হয় নাই। পিতারো বহুদিন মৃত্যু হইয়াছে। এখন আর সংসারে তার ‘আপনার’ বলিতে কেহ নাই। বৃদ্ধ ডাক্তার বামাচরণবাবু তাহাকে মাসে দুইটি করিয়া টাকা দেন, আর সে নিজের হাতে পৈতা তৈয়ারী করিয়া বিক্রয় করে । এখন যে এই দুরবস্থা, এ তাহারি গভীর পাপের শাস্তি । বৃদ্ধ কহিল, “আমার মা, বুঝি, এখানে নাই, বাবা ?” তখন নোলোক-পরা, হাসি-ভরা, কোকড় চুলের গুচ্ছ-ঝরা, সুন্দর একটি ছোট মুখের কথা, চকিতে আমার মনে পড়িয়া গেল ! দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলিয়, আমি কহিলাম, “না, এ দেশে আমি এই নুতন এসেছি। তার, আর মাসখানেক পরে সব, এখানে অtসবে !” ૨ সকালেও অবিশ্রান্ত বৃষ্টি ! বিরাম নাই! অস্থির করিয়া তুলিল! একে বিদেশ, কাছে এমন একটি লোক নাই, যাহার সহিত হুইদণ্ড কথা কহিয়া বাঢ়ি ! তাহার উপর, প্রকৃতির এই নিরানন্দ ভাব ! প্রাণের মধ্যে বিচ্ছেদের ঘন অন্ধকার, বাহিরের আলোক ও রুদ্ধ ! বৃষ্টি!