পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা। নাই ! যে শব্দে তাহার বক্ষের মধ্যে হৃদপিণ্ডটা অত্যন্ত ব্যাকুলভাবে আঘাত করিয়া উঠিয়াছিল তাহা বাস্তবিকই শান্তির হতের চুড়ির ! আনন্দপূর্ণ বিস্ময়ে কলের মতন বলিয়া উঠিলেন “এত রাত্রে তুই কেমন করে এলিরে বুড়ি ?” পরক্ষণেই আনন্দে নিৰ্ব্বাক বসুমতীর দিকে ফিরিয়া কহিলেন “দেখছে। বসু তোমার বেহাই কত ভদ্র, অনেকদিন তুমি মেয়েকে দেখনি তাই নিজেই পাঠিয়ে দিয়েছেন । ওকিরে লতি অমন করে দাড়িয়ে রৈলি কেন ? অtয় মা আমার কাছে আয়, হেম এসেছে তো ? তোকে হঠাৎ যে বড় পাঠালেন ?” বিদ্যুতে পরিপূর্ণ জলীয়বাষ্পে ভরা মেঘখান বর্ষণোন্মুখ ভাবে যখন তাকাশের গায়ে স্তব্ধ হইয়া দাড়ায় তখন কতটুকুই বা উত্তরে হাওয়ার প্রয়োজন থাকে ! একটুখানি মাত্র ঠাণ্ড বাতাসের একট দমকাতেই সেখানাকে ফাটাইয়া সরাইয়া এক কালে নিঃশেষে বর্ষণ করিয়া দেয় । তেমনি করিয়া শান্তির রুদ্ধ বাম্পে ভর হৃদয় সেই বিশ্বাসপূর্ণ মেহাদরে যেন ফাটিয়া পড়িল । পিতার পদতলে মাটিতে বসিয়া অবরুদ্ধ স্বরে উত্তর করিল— “আমায় তিনি পাঠাননি বাবা, আমি লুকিয়ে চলে এসেছি, আমি সেখানে থাকতে পারলুম না—” আর কিছু শান্তি বলিতেও পারিল না ; আর কিছু শুনিবারও প্রয়োজন ছিল না বজtঙ্কভের মতন রজনীনাথ অনেকক্ষণ স্তব্ধ হইয়া রছিলেন। একথাও তাহাকে বিশ্বাস করিতে হইবে ? শাস্তি নিরুত্তরে বলিয়া রছিল। বিস্ময়ে পোষ্যপুত্র। ֆ: Գ বেদনায় কম্পিতকণ্ঠে পিত কহিলেন “নীচের সঙ্গে থেকে তুমি এতে হীন হয়ে গ্যাছ শান্তি ! একথা আমি যে স্বপ্নেও মনে করতে পারিনি । আমার সব যত্ন সব শিক্ষা এমনি করেই জলে ডুবিয়ে দিলে ?” অপরাধিনী একবার নতমুখ তুলিয়া পিতার পানে চাহিল, কিন্তু সেই কঠিন বিচারকের দৃষ্টির সম্মুখে তাহার চকিত দৃষ্টি আপন হইতে পুনরায় নত হইয়া আসিল । দে কি বলিবে ? বলিবে কি তাহার ঈর্ষাপীড়িত স্বামী জোর করিয়া তাহার আশ্রয় নীড় হইতে তাহাকে এখানে টানিয়া অনিয়াছে, সে স্বেচ্ছায় আসে নাই ? স্ত্রী হইয়া স্বামীকে পিতার নিকট অপদস্থ করিলে কি করিয়া ? বসুমতী স্বামীর রূঢ়তায় একটু বিরক্তির সহি ত উঠিয়া আসিয়া মেয়ের হাত ধরিয়া একটু তীক্ষুভাবে বলিয়া উঠিলেন “তুমি ওর ওপোর মিথ্যে রাগ করচ কেন ? নিশ্চয়ই বিনোদের বউ ওকে কিছু বলেছে ; না হয়তে চৌধুরী ভাল ব্যবহার করেনি। নৈলে আমার এমন মেয়ে নয় যে আপনা হতে চলে আসে। তখনি তো তোমায় থলুম ছোট ঘরের মেয়ে কথন ভাল হয় না—আমার বাছাকে আমার কাছে এলে দাও । আয় মা তুই উঠে আয় ।” - শাস্তি নড়িল না, তাহার চোখের কোল ছাপাইয়া যে অজস্র অশ্র জল উথলাইয়া উঠিতেছিল, তাহা ঝর ঝর করিয়া বিন্দুর পর বিন্দু ঋরিয়া পড়িতে লাগিল। কেমন করিয়া সে এ অপবাদ সহ করিবে, কেমন করিয়াই বা সব কথা বলিবে!