পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, তৃতীয় সংখ্যা। মেয়ের গাদি লাগিত, তারাও সত্য বলিতে গেলে, গহনা দেখিতেই আসিত । বিবাহের আট দিন এক রকমে ত, কাটিয়া গেল । দাম্পত্য প্রেমের প্রথম আলাপ শুনিবার উৎকট ইচ্ছায় অনেককে কক্ষের আশে-পাশে প্রচ্ছন্ন থাকিয়া, আঁধারে মশক-দংশন সহ করিয়া অবশেষে নিরাশ হইতে হইয়াছিল। যখন আমার শয্যার অধিখানা অন্ধকার করিয়া তিনি শয়ন করিতেন তখন আমার মনে হইত, ‘আমি’-রূপ চন্দ্রে “তিনি-. রূপ ‘গ্রহণ’ লাগিয়াছেন ! নয় দিনের দিন আমি'গ্ৰহণ’মুক্ত হইলাম । এ কয়দিন তাহার সঙ্গে আমার বা ক্যালাপ— তোমরা যদি বিশ্বাস কর—একটুও হয় নাই। তবে একদিন হইবার উপক্রম হইয়াছিল। সেদিন বড় গরম পড়িয়াছিল। শষ্যার একাংশে পড়িয়া আমি ছট্‌-ফট্‌ করিতেছিলাম, আর ভাবিতেছিলাম—“কোথা থেকে উড়ে এসে (অর্থাৎ শয্যার অৰ্দ্ধেকট) জুড়ে বসেছেন”— সেই সময় আমার হৃদয়ের “অন্ধকার” অতি মৃদ্ধ —আর, আর, তোমরা যদি ঠাট্ট না কর— অতি মধুর স্বরে বলিলেন, “বাতাস করব ?” কিন্তু সে মধুরতায় আমার রূপতৃষ্ণ মিটিল না ; সুতরাং মন ও নরম হইল না । কোন উত্তর না দিয়া আমি বিছানায় পড়িয়া রছিলাম। একটু পরেই চুড়ীর মৃদ্ধ আওয়াজের সহিত পাখার বাতাস মুরু হইল। আমি ঘুমাইয়া পড়িলাম। প্রত্যুষে নিদ্রাভঙ্গে দেখি দেবী “অমাবস্ত” আমার পদ প্রাস্তে অন্ধকার ছড়াইয়া নিদ্রা যাইতেছেন। এক মাস অতীত হইলে আমার বিলাত আদেশ পালন । ২১৭ যাইবার আয়োজন হইতে লাগিল। বিলাত গমনের পূৰ্ব্বে একবার আমাকে শ্বশুরালয়ে যাইতে হইয়াছিল । যাইবার ইচ্ছা ছিল না— কিন্তু নেহাৎ খারাপ দেখায়, সেই জন্ত গিয়াছিলাম, কিন্তু বড় ভয়ে-ভয়ে ! যদি আবার অামার “অন্ধকার” দেখা দিয়া সম্ভাষণ করিতে আসেন ? তাহাকে দেখিলেই আমি যে তাহার স্বামী এই কথাটা আমার মনে আসিয়া পড়িত—আমার তাহাতে বড় লজ্জা ও অপমান বোধ হইত ! ছিঃ ছিঃ আমি এই বিশ্বকুৎসিতার স্বামী ! শ্বশুর বাড়ীতে গিয়া দেখি সেখানে রটিয়া গিয়াছে ‘অন্ধকার’কে আমার পছন্দ হইয়াছে। আমি অতি “সুবোধ” “সুশীল” ইত্যাদি নানাবিধ প্রশংসা-বাণী আমার উপর বর্ষণ করিয়া শ্বশুর বাড়ীর লোকের জানাইলেন যে,তাহাদের অন্ধকার মেয়েটিকে আমি হাসি মুখে গ্রহণ করেছি শুনিয় তাহারা পরম সুখী ! আমি-ত শুনিয়া অবাক ! তাহারা যে আমাকে এইরূপ সৌন্দৰ্য্যজ্ঞানহীন ভাবিয়াছেন ইহাতে আমি মনে মনে বড়ই চটিয়াছিলাম—কিন্তু হাজার হোকৃ তবু শ্বশুরবাড়ী ! সেদিন সেখানেই রাত্রিটা কাটাইতে হইল । ‘অন্ধকার’ আসিয়া অামায় প্রণাম করিলেন । আমাকে নীরব দেখিয়৷ -“তিনি একটি ছোট-খাট নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, “আমি তোমার কি করেছি ?” আমি নীরব। এবার যেন একটু অভিমানভরে তিনি বলিলেন, “আমি কালে কুৎসিত, তা তুমি কেন আবার বিবাহ কর ন৷ ”