পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

રફેં8" রজনীনাথ পর্য্যস্ত সকলকে সাক্ষী রাখিয়াই পুনঃ পুনঃ প্রতিজ্ঞা করিল। ইণ্ডিয়ার মানচিত্রে কোন একটি নগরের অস্তিত্ব লইয়া গুরুশিষ্যে সেদিন ভারী মনোমালিন্য চলিতেছিল। ছাত্র জলভরা চোখ ও কম্পিত অধরে ভূত্যের দ্বারা আনীত হইয়৷ ঘরে ঢুকিবামাত্র মাষ্টার মহাশয় তাহার মানসিক অবস্থা সম্বন্ধে কিছুমাত্র কৌতুহলী ন হইয়া একেবারে ম্যাপ খুলিয়া তাহার মধ্য হইতে একটা স্বষ্টি ছাড়া অনাবশ্যক দেশের নাম খুজিয়া বাহির করিতে আদেশ করিলেন। এবিষয়ে তাহার অনুরাগের কথা জানা ছিল বলিয়াই তিনি তাহাকে ভুলাইবার জন্তই এই ফন্দি আঁটিয়া ছিলেন কিন্তু ইহাতে আজ হিতে বিপরীত হইল । কলম্বদ যখন প্রথম আমেরিকার উপকূলে দাড়াইয়। তাহা নিজের আবিষ্কৃত নুতন জগৎ বলিয়া জানিতে পারিলেন তখন র্তাহার যে প্রকার মনোভাব হইয়াছিল, বিচিত্র বর্ণের ভূগোল চিত্র হইতে ক্ষুদ্র অক্ষরে ছাপান নূতন নুতন দেশের নাম আবিষ্কার করিয়া সে সেই রকমই একটা আত্ম প্রসাদ লাভ করিত । কিন্তু আজি তাহার মনের সে অবস্থা নয়। দুএকবার চিত্রের দিকে চাহিয়া দেখিতে দেখিতে হঠাৎ সে রাগিয়৷ গেল। পুস্তক হইতে দৃষ্টি উঠাইয়া গম্ভীর মুখে চেয়ার ছাড়িয়া দাড়াইল, মাষ্টার তাহাকে চিনিতেন,–বুঝিলেন বিপদ সামান্ত নয়। রজনীনাথের জুতার শব্দে মুকু অন্ত দিন শান্তমূৰ্ত্তিতে ফিরিয়া আসে—আজও একবার সে চঞ্চল হইয়া উঠিয়াছিল কিন্তু তৎক্ষণাৎ সেভাব সামলাইয়া লইয়া আরও কঠিন হইয়া দাড়াইল। মাষ্টারের উত্তেজিত স্বর বিমন। ভারতী । শ্রাবণ, ১৩১৭ রজনীনাথকে অনেকক্ষণ পরে যখন সেঘরে টানিয়া অনিল তখন ও তাহার কাপড় ছাড়া হয় নাই। রজনীনাথ কি হইয়াছে জানিতে চাহিলেন না, পুত্রের কাছে আসিয়া তাহার কুঞ্চিত কেশের উপর ডান হাতটি রাখিয়t বামহস্তে তাহাকে কোলের কছে টানিয়া লইয়া একবার গম্ভীর বিষাদপূর্ণ দৃষ্টিতে পুত্রের দিকে চাহিয়া দেখিলেন । সুকুর ঠোট কঁপিতেছিল, চোখের জল এতক্ষণ জেদ করিয়া চাপিয়া রাখিয়াছিল কিন্তু আর সে নিজের মর্য্যাদা রক্ষা করিতে পারিল না ; ফোপাইয়া কাদিয়া উঠিল। রজনীনাথ একটুখানি চুপ করিয়া থাকিয়া মাষ্টারের দিকে ফিরিয়া ধীরভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন “সুকুব আজ শরীর ভাল নেই অবাধ্যতার জন্ত আপনাকে প্রণাম করে মাপ চাইলে কি ওকে আজ ছুটী দেবেন ?” মাষ্টার চলিয়া গেলে গভীর স্নেহে পুলকে বুকে টানিয়া লইয়া রজনীনাথ তাহার ললাটে অনেকক্ষণ ধরিয়া অনেকখানি স্নেহ ঢালিয়। চুম্বন করিলেন। বালক সেদিনকার অপরাধের সামান্ত শাস্তির পরেই এতখানি অাদরের মৰ্ম্ম ঠিক তাহার সজল গম্ভীর মুখে খুজিয়া না পাইলেও আপন! আপনিই কেবলি তাহার চোখে জল আসিতে লাগিল । পিতার প্রতি অভিমান ভুলিয়া গিয়া তাহার উপর কেমন যেন একটা প্রবল সহানুভূতি আসিয়া পড়িল, মনে হইতে লাগিল, “বাবা কেন আজ এমন করে চাইচেন, বোধ হয় বাবাও মনে করচেন দিদি এখন বাবাকে সে রকম ভালবাসে না । দিদি কেন এমন হলো !” রজনীনাথ অনেক রাত্রে শয়ন করিতে গেলেন। নিঃশব্দে দিনরাত্রি কাটিয়া গেল।