পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, চতুর্থ সংখ্যা। যুদ্ধে প্রবৃত্ত ; এবং অবশেষে এই কঠোর সংগ্রামের ফলে ও মনুষ্যজাতিবিশে.যর খাদ্য ও অবস্থাদির প্রভাবে এক এক জাতির দেহে বীজাণুর শ্রেণীবিশেষ অধিক পুষ্টি লাভ করে এবং কতকগুলি বীজাণু একেবারেই নষ্ট হইয় যায়। এই প্রকারে জাতিবিশেষের খাদ্য ও অভ্যাসবিশেষের ফলে কতকগুলি বীজাণু এক এক জাতিতে অধিক প্রাধান্ত লাভ করিতে দেখা যায় । এরূপ অবস্থায় এই প্রাকৃতিক বিধানে হস্তক্ষেপ করা বিপজ্জনক ন হইলেও নিতান্ত দুঃসাহসের কৰ্ম্ম সন্দেহ নাই । এইরূপ প্রাকৃতিক বিধানে হস্তক্ষেপ করিলে কোন বিষাক্ত বীজাণু অতিরিক্ত প্রাধান্ত লাভ করিয়া দেহের বিশের অনিষ্ট সাধন কর। কিছুই আশ্চৰ্য্য নহে । মেচনিকফ, মনুষ্যের অন্ত্রস্থলে ল্যাকৃটিক্‌ বাঞ্জাণু প্রবিষ্ট করাইয়া বিষাক্ত বীজাণু নষ্ট করিবার প্রস্তাব করিয়া অসমসাহসের পরিচয় দিয়াছেন সন্দেহ নাই। তাহার মতে দেহস্থিত বীজাণুকে স্বাভাবিক ক্রিয় ও গতি দিয়া আমাদের নিশ্চেষ্ট হইয়া বসিয়া থাকা কোন মতেই কওঁব্য নহে-উপরন্তু তাহাদিসকে খৰ্ব্ব ও নষ্ট করিবার চেষ্টা করাই কৰ্ত্তব্য । তিনি বলেন,--প্রথম অবস্থায় এই সকল বিষাক্ত বীজাণুকে আয়ত্তগত করিতে ধাইয়t আমাদিগের অনেক ভুল ক্রটি হওয়া সস্তুব সত্য, কিন্তু তাহ ভিন্ন কোন উন্নতিই কখনও লাভ করা সম্ভব হয় নাই এবং ভবিষ্যতে হইবে বলিয়াও আশা করা যায় না। ভ্রান্তির সস্তাবনা আছে বলিয়া ব্যাধি ও মৃত্যুর অন্যায় পীড়ন নীরবে সহ করা মুখত মাত্র । অনেক কাল হইতে আমাদের মধ্যে একটা ধারণা আছে যে, পচনক্রিয়াশীল বীজাণুগুলি আমাদের পাকস্থলীর খাদ্যকে চূর্ণ করিয়া পরিপাকে সহায়তা করে এবং সেই মিশ্রিত দ্রব খাদ্য হইতে দেহ তt২ার আবশ্বকীয় রক্ত শোষণে সক্ষম হয় । উদ্ভিদের দেহ পুষ্টির ক্রিয়া লক্ষ্য করিলে এই মতই অনেকটা সত্য বলিয়া মনে হয়। ভূপৃষ্ঠে যে সকল মৃতদেহ এবং জীব ও উদ্ভিদের মলাদি পতিত হয়, তাহই উদ্ভিদমাত্রেরই খাদ্য হইলেও বীজাণুবিশেষ তাহার উপর পতিত হইয়। রাসায়নিক ক্রিয়ার দ্বার। যতক্ষণ নী চয়ন—বিবিধ । ৩২৫ তাহাকে নানাপ্রকার রাসায়নিক বস্তুতে বিশ্লেষিত করে, ততক্ষণ কোন উদ্ভিদই তাহা খাদ্যম্বরূপে গ্ৰহণ করিতে পারে না। ঐ সকল মৃতদেহ ও মলাদি রাসায়নিক রসে পরিণত হইলে পর তবে উদ্ভিদ তাহা আকর্ষণ করিয়| আপুন দেহমধ্যে খাদ্যরূপে গ্রহণ করে । সেইরূপ আমাদিগের দেহমধ্যেও খাদ্যকে বিশ্লেষিত, করিয়া পরিপাকের উপযুক্ত করিবার নিমিত্ত পচনকারী ধাজীপুর অবস্থিতি আবিষ্ঠক ইহা আশ্চৰ্য্য নহে। কয়েক বৎসর পূর্বে এক পাশ্চাত্য বিজ্ঞানবিদ (Schottelius) নবজাত কুকুটশাবক লইয়া পরীক্ষা করিয়াছিলেন । ডিম্ব হইতে নিষ্ক্রান্ত হইবামাত্র বৈজ্ঞানিক উপায়দ্বারা তিনি তাহাদিগের খাদ্য ও বাসগৃহ বীজাণু বর্জিত করিয়া দেখিলেন যে শাবকগুলি অল্পকালের মধ্যেই দুৰ্ব্বল হইয়া মৃত্যুমুখে পড়িল। তাহীদের খাদ্যমধ্যে কতকগুলি বীজাণু মিশ্রিত করিয়া দিলেই তাহার ক্রমে স্বস্থ ও সবল হইয়া পক্ষীতে পরিণত হইতে পরিত। ইহা হইতে তিনি মীমাংসা করিলেন যে, অন্ত্রমূলে বীজাণু ব্যতিরেকে প্রাণীগণের জীবন ধারণ একেবারে আসস্তব । দুই বৎসর পূৰ্ব্বে একজন রুষ বিজ্ঞানবিদ মাছির ডিম লইয়া এক অভিনব পরীক্ষা করিয়াছিলেন । কতকগুতি ডিম লইয়। পরিচ্ছন্ন করিয়া এক বিশুদ্ধ মাংসখণ্ডের উপরে রাখিয়া দিলেন। ডিমগুলি ফুটিয়া সেই মাংস খাইতে লাগিল । অপর কতকগুলি বীজাণুপুর্ণ অবস্থায় থাকিয় বিষাক্ত বীজাণুপূর্ণ পচা মাংস খাইতে লাগিল । আশ্চৰ্য্য এই যে শেষোক্তগুলিই পূৰ্ব্বদল অপেক্ষ অনেক পুৰ্ব্বে পরিপুষ্ট হইয়। উঠিল। ইহ দেখিয় তিনি স্থির করিলেন যে পচামাংসের বীজাণুগুলিই শেষোক্ত মাছিগুলির পরিপাক ক্রিয়ার সহায়তা করে বলিয়াই তাহার। অত শীঘ্ৰ পুষ্ট হইয়। উঠিল। এই স্থির করিয়া তিনি কতকগুলি পরিচ্ছন্ন , fছ লইয়। তাহাদিগকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় পচান মাংস খাওয়াইতে লাগিলেন । তাহীতে তাহারা বেশ সবল ও পুষ্ট হইতে লাগিল। ইহা হইতে তিনি স্থির করিলেন যে পচনশীল বীজাণুগুলি এই সকল মাছির পাকস্থলীতে প্রবেশ করিয়া মাংস পরিপাকে সহায়তা করে ।