পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৪৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$5.6 বাহিরে অশ্বগৃষ্ঠে আর চারিজন প্রহরী গাড়ীর সহিত চলিল ! আমাকে পাহারা দিবার জন্ত আটজন সশস্ত্র প্রহরী এবং তদতিরিক্ত লোকজন ত ছিলই । রাজার মত চলিয়াছি ! গাড়ী ছাড়িয়া দিল । জলে, রাস্তার পাথর বাহির হইয়া পড়িয়াছিল। ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ স্পষ্ট গুনা যাইতেছিল। পশ্চাতে সশব্দে জেলের ফটক বন্ধ হইল –সে শব্দও শুনিলাম। আমি যেন তন্দ্রাবিষ্ট হইয়া ছিলাম— কোন ভয় বা ভাবনা ছিল না । চোখে জল বা মুখে হাসিও ছিল না ! যেন আমার জীবন্ত কবর হইয়া গিয়াছে, এমনি ভাবখানা ! ঘোড়ার গলায় ঘণ্টা বাধা ছিল— তাহার চাকার ও ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দ সমস্ত একত্র মিলিয়া বেশ একটি বিচিত্র রাগিণীর স্বষ্টি করিল। যেন ঝড়ের পিঠে চড়িয়া কোথায় আমি নিরুদেশ যাত্রায় বাহির হইয়াছি । যেন কোন স্বপ্নলোকে, কোন ঘুমন্ত পরীকস্তার সন্ধানে চলিয়াছি। গাড়ীর মধ্যে, ছিদ্র দিয়া পথ দেখিতেছিলাম। এক জায়গীয় প্রকাও অক্ষরে, "বৃদ্ধদিগের জন্ত হাসপাতাল,” কথাটি লেখা রহিয়াছে ! এ জগতে, তবে, লোক বুদ্ধ হইবার অবকাশ পায় ! আশ্চৰ্য্য ব্যাপার, সন্দেহ নাই ! এই ত আমার তরুণ বয়সকিন্তু যাক, সে কথা ! গাড়ী মোড় ঘুরিল। দুরে নোতর-দামের চুড়া দেখা গেল—পারি সছরের কুয়াস ভেদ করিয়া গগনস্পর্শ চুড়া উঠিয়াছে ! আমি ভাবিলাম, "বাঃ, উছার উপর হইতে চারিধারট বেশ দেখিতে পাওয়া যায়, নিশ্চয় ।” এই সময় আচাৰ্য্য নুতন করিয়া আলাপ ভারতী। ভাদ্র, ১৩১৭ আরম্ভ করিলেন। তিনি অনর্গল বকিয়া চলিলেন, বাধা দিবার জন্ত ত কেহ ছিল নাআমি সে কথায় কর্ণপাতও করি নাই ! আচার্য্যের গল্প অপেক্ষা ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দে বেশ একটা মধুরতা ছিল । চারিধারেই ত বিচিত্র কোলাহল—মাত্রা আর একটু বাড়িলে, ক্ষতি কি ? সমস্ত শব্দ কাণে আসিয়া লাগিতেছিল ! কিন্তু কোনটি স্বতন্ত্রভাবে নছে—ৰেশ একটী মিশ্র রাগিণী,—নিবারের ধারাপাতের অনুরূপ । সহসা শুনিলাম, আচাৰ্য্য বলিতেছেন, “কি বিশ্ৰী গাড়ী,—একটা কথাও যদি শুনিবার জে থাকে ।” কথাটি সত্য—র্থাটি সত্য, এতটুকু অতিরঞ্জিত নহে। আচাৰ্য্য কহিলেন,“তুমি, বোধ হয়, আমার কথা শুনতে পােচ্ছ না ! কি বলছিলাম,— ই, ভালো কথা, সারা পারি কিসের সংবাদে আজ সরগরম, জানো কি ?” আমি শিহরিয়া উঠিলাম ! নুতন সংবাদ আবার কিছু আছে নাকি? বোধ হয়, আমারি কথা লইয়া পারিতে হুলস্থল বাধিয়া গিয়াছে। আচাৰ্য্য কহিলেন, “কাগজখানাও ত সন্ধ্যার আগে দেখিবার সুবিধা হবে না ! সন্ধ্যার পর, আমি খবরের কাগজ পড়ি, একেবারে দিনের শেষ খপরটি অবধি পাওয়া যায়—তাতে নিশ্চিস্ত হওয়া যায়।” সর্দার প্রহরীর কথা ফুটিল—সে কহিল, “কি ? এমন মজার খপর কিছু শোনেননি, এখনো ?” . - আমি কছিলাম, “আমি জানি, বোধ হয় ।”