পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৪৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪ শ বর্ষ, পঞ্চম সংখ্যা । বিহীন ও কঠোরতা পরিশুষ্ঠ সহজ চলিত ভাষা স্বচ্ছন্দ বিহারিণী তরঙ্গিনীর ন্যায় তরতর প্রবাহে প্রবাহিত হইয়া বঙ্গসাহিত্যের অভিনব শোভা ও উন্নতি সম্বৰ্দ্ধন করিতেছে দেখিয়া একদল ইংরাজী শিক্ষিত লোক উহার বিশেষ পক্ষপাতী হইয়া উঠিলেন ! অন্যদিকে প্রবীণ সুবিজ্ঞ পণ্ডিতের দল উহা গম্ভীৰ্য্যবিহীন, নিতান্ত তরল ও গ্রাম্য ভাষা বলিয়া উহার অসারতা প্রতিপাদনে বদ্ধপরিকর হইলেন । প্রাচীনতন্ত্রের সহিত নব্যতন্ত্রের ঘোরতর মতভেদ ও বিবাদ বাড়িতে লাগিল । দেখিতে দেখিতে প্যারীচঁাদ প্রবৰ্ত্তিত নূতন ভঙ্গিমাবিশিষ্ট সহজ ভাষার প্রভাব চারিদিকে বিস্তৃত হইয়া পড়িল । তাহার প্রদর্শিত পথ অবলম্বনে অনেকে পুস্তক ও প্রবন্ধ রচনায় প্রবৃত্ত হইলেন । অল্পদিনের মধ্যে প্যারীচাদের অবরোধমুক্ত সরলভায। বঙ্গসাহিত্যের পরিপুষ্টিসাধন ও সম্পদবদ্ধনে এক নুতন যুগ আনয়ন করিল ! প্যারাচাদের স্বচ্ছন্দ বিহারিণী আবেগময়ী ভাষার প্রভাব ও প্রতিপত্তি (দখিয়া কতকগুলি সংস্কৃতভিমানী পণ্ডিত র্তাহার উপর তীব্র সমলোচনার বাণ বর্ষণে প্রবৃত্ত হইলেন। ইহাদের মধ্যে সোমপ্রকাশের সম্পাদক স্বৰ্গীয় দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ ও স্বৰ্গীয় পণ্ডিত রামগতি ন্তায়রত্ন মহাশয়ের নাম সৰ্ব্বাত্রগণ্য। পণ্ডিত রামগতি দ্যায়রত্ন তৎপ্রণীত “বাঙ্গাল ভাষা ও বাঙ্গালী সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাবে” প্যারীচাঁদ প্রবৰ্ত্তিত ভাষীর “অtলালী ভাষ।” এই নাম দিয়া উহার বিস্তৃতরূপ সমালোচনা করিয়াছিলেন। নিম্নে তাহার কিঞ্চিৎ নমুনা প্রদর্শন করিতেছি । লঙ্গসাহিত্যে প্যারীচঁাদ । 8"> "আলালের ঘরের দুলাল বল, হুতুম পেচার নক্স, বল, আর মৃণালিণী বল -পত্নী বা পাঁচজন বয়স্তের সহিত পাঠ করিয়া আমোদ অনুভব করিতে পারি— কিন্তু পিতাপুত্রে একত্র বসিয়া অসঙ্কুচিত মুখে কখনই ওসকল পড়িতে পারি না । বর্ণনীয় বিষয়ের লজ্জাজনকতা উহা পড়িতে না পরিবার কারণ নহে—ঐ ভাষাতে কেমন একরূপ ভঙ্গ আছে, যাহা গুরুজন সমক্ষে উচ্চারণ করিতেও লজ্জা বোধ হয় ।" অন্তক্র,— “অালালী ভাষা সম্প্রদায় বিশেষের বিশেষ মনোরঞ্জিক হইলেও উহ। সৰ্ব্ববিধ পাঠকের পক্ষে উপযুক্ত ; নহে। যদি ভাহ) ন হইল, তাহী হইলে জিজ্ঞাস্ত হইতেছে যে ঐ রূপ ভাষায় গ্রন্থ রচনা করা উচিত কিনা ? আমাদের বোধে অবস্ত উচিত। যেমন ফগারে বসিয়৷ অনবরত মিঠাই মণ্ডা খাইলে জিহবা একরূপ বিকৃত হইয়া যায়—মধ্যে মধ্যে আদর কুচি ও কুমড়ার খtট্রা মুখে না দিলে সে বিকৃতির নিবারণ হয় না, সেইরূপ কেবল বিদ্যাসাগরী রচন। শ্রবণে কর্ণের যে একরূপ ভাব জন্মে তাহার পরিবর্তন করণীর্থ মধ্যে মধ্যে অপরবিধ রচনা শ্রবণ করা পাঠকদিগের আবশ্ব ক । ফল কথা এই যে পাঠক যেমন নানাপ্রকার, তাহাদের রুচিও সেইরূপ নানাপ্রকার।" কোন কোন সমালোচক “আলালী* ভাষার প্রতি নিষ্ঠুরভাবে আক্রমণ করিতে প্রবৃত্ত হইয়া পরক্ষণেই মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করিয়াছেন যে উহা বঙ্গসাহিত্যের পরিপুষ্টি সাধনের নূতন প্রণালী প্রবর্তনে অনেকের চিত্তাকর্ষণে সমর্থ হইয়াছে।” বস্তুতঃ উক্ত ভাষার ধিনি যতই দোষ বাহির ও নিন্দাবাদ করুন না কেন, তাহাকে একথা অবশ্য স্বীকার করিতে হুইবে যে, প্যারীচাদ বঙ্গভাষাকে কঠিন অবরোধ উন্মোচন