পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৩২ পুৰ্ব্বক স্বধৃঢ় ও সুরক্ষিত গণ্ডির বাহিরে আনিয়া উহাতে নুন্তন প্রাণ ও অপূৰ্ব্ব আবেগ ঢালিয়া দিয়। জাতীয় সাহিত্যের বিশেষ উন্নতিসাধন করিয়াছেন। সেই স্বদেশপ্রেমিক বিশেষরূপে বুঝিয়াছিলেন যে প্রাতঃস্মরণীয় আর্য্যসস্তানগণের প্রতিভা ও সুকৃতির বিশালক্ষেত্র বঙ্গভূমি আহারে,বিহারে, আচারে ব্যবহারে আমোদে প্রমোদে, শিক্ষায় দীক্ষায়, সামাজিক ও ধৰ্ম্মনৈতিক, সকল বিষয়ে যেরূপ বিজাতীয়ভাবে অনুপ্রাণিত ও স্বেচ্ছাচার-সন্মত কদৰ্য্য রীতিনীতি ও প্রথায় পরিপ্লাবিত হইতে আরম্ভ করিয়াছে, তাহার সংশোধন ন হইলে এদেশের শোচনীয় দুরবস্থা উপস্থিত হইবে । তিনি ইহাও জানিতেন যে চলিতভাষাষ সহজ কথায় সরলভাবে লিখিত হস্ত ও করুণরসোদ্দীপক প্রবন্ধ সহজেই জনসাধারণের চিত্তাকর্ষক ও প্রীতিপ্রদ হইবে, এবং উক্তরূপ প্রবন্ধের বহুল প্রচারে বঙ্গসাহিত্যের যথেষ্ট উন্নতি ও তৎসঙ্গে বঙ্গভূমির বিস্তর কল্যাণ সাধিত হইবে। অল্পদিনের মধ্যেই আলালের ঘরের দুলালের গৌরব বঙ্গদেশের চারিদিকে বিস্তৃত হইয়া পড়িল । যে দেশে বর্তমান সময়েও স্কুল বা কলেজের নির্দিষ্ট পাঠ্য পুস্তক ভিন্ন বিস্তর উৎকৃষ্ট ও উপাদেয় গ্রন্থ অনাদরে উপেক্ষিত হয়, সেই দেশে এক সময়ে “আলালের ঘরের দুলালের” বিশেষ আদর ও প্রতিপত্তি ছিল। তৎকালে এ দেশে যে সকল ভাগ্যবান পুরুষ “মুরলিধ” বলিয়া পরিচিত ছিলেন, অন্তঃপুরে প্রবিষ্ট হইলে র্যাহারা “রসিকচুড়ামণি” বলিয়া সম্মানিত হইতেন, ছাত্র ভারতী। ভাদ্র, ১৩১৭ সভায় বিবাহ বাসরে ও বরের আসরে বৈঠকখানায়, ও অন্তান্ত প্রকাশু সন্মিলন স্থলে যাহারা রসাত্মক মধুমাথা কথার অবতারণা করিতে ভাল বালিতেন, শুনিয়াছি “আলালের ঘরের দুলাল” এক সময়ে তাহাদের প্রধান উপভোগ্য ছিল ; তদ্ভিন্ন সাধারণ পাঠকবর্গ এই গ্ৰন্থখানি বিশেষ অনুরাগ ভরে পাঠ করিতেন । “আলালের ঘরের দুলাল” প্রকাশিত হষ্টবার পর দীর্ঘকাল বঙ্গদেশে দুই প্রকার ভাষার প্রভাব ও প্রতিপত্তি ছিল—একটী বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রমুখ ইংরাজী ও সংস্কৃত উভয় ভাষাবিদ লেখকগণের পরিমার্জিত সাধুভাষী, অপরট প্যারীচঁাদ প্রমুখ লেখকদিগের অবলম্বিত গ্রাম্য কথামিশ্রিত চলিত সরলভাষা । কোন ভাষা ভবিষ্যভে fশক্ষিত সমাজে বিজয় লাভ করিবে তৎসম্বন্ধে অনেক চিন্তাশীল ব্যক্তির অন্তর দীর্ঘকাল গভীর সন্দেহে আন্দোলিত হইয়াছিল। দূরদর্শী চিন্তাশীল ব্যক্তিগণ ধীরভাবে পর্য্যালোচনা করিয়া এই সহজ সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছিলেন যে, উক্ত দুষ্টপ্রকার ছাচের ভাষার সম্মিলনে একটা মিশ্র ভাষার উৎপত্তি হইবে ; পরে তাহাই বঙ্গসাহিত্যে বিশেষ আধিপত্য স্থাপন করিবে । এই মিশ্র ভাষা ব্যবহারের উজ্জল দৃষ্টান্ত বঙ্গভূমির ক্ষণজন্ম স্বসন্তান সুবিখ্যাত উপন্যাসলেখক স্বনামধন্ত মহাত্মা বঙ্কিমচন্দ্ৰ সৰ্ব্বাগ্রে প্রদর্শন করিয়াছেন । ইনিই ভক্ত শিষ্যের হায় প্যারীচাদ প্রদর্শিত পথ আগ্রহের সহিত অবলম্বনে তৎপ্ররৰ্ত্তিত ভাষা অধিকতর পরিমাণে মার্জিত, সুকোমল, শ্রুতিমধুর ও মনো