পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৪৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, পঞ্চম সংখ্যা। মুগ্ধকর করিয়া বঙ্গ সাহিত্যকে বিবিধ রত্নালস্কারে বিভূষিত করিয়া উহার বিপুল গৌরব বৰ্দ্ধনে অমরতা লাভ করিয়াছেন । বঙ্গসাহিত্যে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রভাবকালেও আলাগীভাষা ও সাধুভাষার প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা বহুল পরিমাণে পরিলক্ষিত হইয়াছিল । ইহা নিবারণের জন্ত অনেকে অনেক প্রকার উপদেশ দিয়াছিলেন । ইহাদের মধ্যে বঙ্গসাহিত্যাকুরাগী সুবিখ্যাত সিভিলিয়ান শ্ৰীযুক্ত জন বিম্স্ একটা সুন্দর প্রস্তাব করিয়াছিলেন। তিনি ১৮৭২ খৃঃ অব্দে বাঙ্গালাভাষার দুইশ্রেণীর লেখকদিগের অবলম্বিত ভাষার সমালোচনা ও র্তাহীদের বিভিন্ন ভঙ্গিময় রচনার সামঞ্জস্ত উদ্দেশ্যে যে স্বযুক্তি পূর্ণ প্রস্তাব করিয়াছিলেন তাহার সংক্ষিপ্ত মৰ্ম্ম এই— “সাহিত্য আলোচন ও সভ্যতায় বঙ্গদেশ ভারত বর্ষের অন্যান্ত দেশের অগ্রগামী—তাহার সাহিত্য ভারতের অন্যাস্য প্রাদেশিক সাহিত্যের শৈশবাবস্থ৷ অতিক্রম করিয়৷ ইয়ুরোপীয় আদর্শের নিকটবৰ্ত্তা হইয়াছে। এই সময় বাঙ্গাল ভাষাকে একটী নির্দিষ্ট ছাচে ফেলিয়া উহাকে সৰ্ব্বসম্মতিক্রমে নির্দিষ্ট ভাবে গঠনের সময় উপস্থিত হইয়াছে। একদিকে সংস্কৃত শব্দের ও সমাসের অতিরিক্ত প্রসারণ রোধ করা যেমন কৰ্ত্তব্য, অপর দিকে প্রচলিত গ্রাম্য শ বদর অঘথা ব্যবহার তেমনই পরিহার্য্য , যাহাঁতে বাঙ্গাল ভাষায় দলাদলি ভাব না থাকিয়া উহা নির্দিষ্ট নিয়মে সুশৃঙ্খলাবদ্ধভাবে এক ভাবে দাড়ায় তজ্জন্ত আমি একটা সভা (Academy) সংস্থাপনের পর.মশ দিতেছি—উহার সহায়তায় বাঙ্গালী ভাষা সুগঠিত ও একটা নির্দিষ্ট প্রণালীতে পরিচালিত হইবে।” বঙ্গসাহিত্যের বন্ধু শ্ৰীযুক্ত বিম্স্ সাহেবের বঙ্গসাহিত্যে প্যারীচঁাদ । 8ථාව প্রস্তাব সৰ্ব্বথ। মুসঙ্গত বিবেচিত হইলেও দীর্ঘকাল কেহই তদনুসারে কার্য্য করিতে উদ্যোগী হন নাই। প্রায় বারবৎসর পরে তংপক্ষে একটী সামান্ত উদ্যোগের পরিচয় পাওয়া গিয়াছিল। কিন্তু সাহিত্যসেবিগণের মতের বিভিন্নতা জনিত তাহ বিফল হইয়াছিল। উহার একুশ বৎসর পরে তৎসম্বন্ধে যে পুনরুদ্যম হইয়াছিল তাহার ফল স্বরূপ বর্তমান সাহিত্যপরিষৎ ও সাহিত্যামুরাগী সহৃদয় রাজা বিনয়কৃষ্ণ দেব বাহাদুরের যত্ন-পরিপুষ্ট সাহিত্য সভার উৎপত্তি হইয়াছে। এই দুই সভা বিম্স্ সাহেবের পরামর্শ অনুরূপ প্রণালীতে পরিচালিত না হইলেও এতদূৰ্বারা তাহার উদ্দেশু সাধনের ব্যবস্থা অলক্ষিত ভাবে প্রবৰ্ত্তিত হইয়াছে । আলালী ভাষা ও মিশ্রভাষার সমালোচনায় আমি কিছু দূরে আসিয়া পড়িয়াছি। আলালের ঘরের দুলালের প্রতিপত্তি প্রদর্শনের জন্ত আমি আর দুই একটী কথার উল্লেখ করিব । যে সকল ইংরেজ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া এ দেশে রাজ কার্য্যে নিযুক্ত হইতেন, বাঙ্গালী ভাষায় অধিকার লাভের জন্ত দীর্ঘকাল ধরিয়া উক্ত পুস্তক তাহাদের প্রিয় পাঠ্য পুস্তকরূপে পরিগৃহীত হইয়াছিল । তাহার তদানীন্তন পণ্ডিতগণের কঠোর ও বোধ্য ভাষা পরিহার পূর্বক আবেগময়ী আলালী ভাষার মধুরতা পূর্ণমাত্রায় উপভোগ করিতেন। ভারতবাসী ইংরেজ সমাজে উক্ত পুস্তকের বিশেষ আদর হইয়াছিল। মু প্রসিদ্ধ কাউয়েল সাহেব একবার ইংরাজীভাষায় উহার অম্বুবাদ প্রণয়ণ করিতে যত্নবান হইয়াছিলেন, কিন্তু তাহ সহজ-সাধ্য নহে