পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৪৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বধ, যষ্ঠ সংখ্যা। হাতী ঘোড়ার চীৎকারে কান ঝালাপালা ! সে ভাবলে এ তো চলবে না । একটা উপায় করতে হবে-নইলে তিষ্ঠতে পারব না, জপতপ সব ঘুরে যাচ্ছে। নৰ্ত্তক কি চায় সেকথা তাকে জিজ্ঞাসা করে তাকে তাড়াতে হচ্ছে । এই ভেবে সে নর্তকীকে বল্লে— “কি চাও তুমি ?” সন্ন্যাসীর মুখে কথা শুনে নর্তকীর মনে আশার উদয় হল । সে ভাবলে এতদিনের সাধনা অজ বুঝি সফল হল । সে বল্লে— *বাবা ঠাকুর । আমার রূপের যাতে ক্ষয় না হয় তাই তোমায় করতে হবে ।” সন্ন্যাসী বল্লে—“সে কি কথা ! আমি তার কি করব ।” নর্তকী বুঝলে এক কথায় কাজ হচ্চে না । তখন লে সন্ন্যাসীকে খুব করে ধরে পড়ে বল্লে—“তুমিই পারবে ! ঠাকুর তাই ত তোমার শরণ নিয়েছি।” কথা শুনে সন্ন্যাসী হো হো করে হেসে উঠল। বল্লে—“রূপ কখন অক্ষয় হয়!” নর্তকী বল্লে—“হয় ঠাকুর । হয় ! তোমরা দেবতার জানিত লোক –তোমরা সব পারে। আমি কোনো কথা শুনচি না ! অক্ষয় রূপ না দিলে কিছুতে ছাড়ব না-এই রইলুম পড়ে!” সন্ন্যাসী একটুখানি হাসলে। বল্লে— “কৃপণ তার ধনকে কেমন করে অক্ষয় করে রাখে জান ?” অক্ষয় রূপ। 886. নটী বল্লে—“জানি। কৃপণ টাকা মাটিতে পুতে রাখে ।” সন্ন্যাসী বল্লে—“কৃপণের টাকার মতো তোমার রূপকে সকলের দৃষ্টি থেকে যদি একেবারে লুকিয়ে ফেলতে পার তাহলে রূপ তোমার অক্ষয় হয়ে থাকবে ।” নটী চুপ করে বসে ভাবলে ;–নিশ্বাস ফেলে জিজ্ঞাস কল্লে—“সকলকে লুকিয়ে যদি কেবল এক জনের কাছে দেখাই তাহলে কি ক্ষতি হবে ?” সন্ন্যtণী বলে –“হা, তাহলেও ক্ষয় হতে থাকবে ।” নটী বল্লে—“এমন করে লুকবো কি উপায়ে ?” সন্ন্যাসী হেসে বল্লে—“উপায় আমি ঠিক করে দেব। তুমি যদি মনের সঙ্গে ইচ্ছা কর তাহলে তোমার রূপ আমি এমন করে ঢেকে দেব যে কোথাও একটুও ছিদ্র থাকবে না ;– তোমার রূপ আছে বলে কেউ সন্দেহও করতে পারবে না ।” নর্তকী আবার একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে চুপ করে রইল। সন্ন্যাসী বল্লে—“আজ রাতে চিন্তা করে দেখো, কাল সকালে এসে তোমার ইচ্ছ জানিয়ো ।” পরদিন সকালে নটী ফিরে এসে সন্ন্যাসীকে প্রণাম করলে ৷ বল্লে—“আমার-অক্ষয় রূপে প্রয়োজন নেই ঠাকুর !” শ্ৰীমণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়।