পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৪৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, ষষ্ঠ সংখ্যা। পাওয়া অসম্ভব ।” নবপ্রতিষ্ঠিত আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা যুবক আবার বহুক্ষণ নীরব হইয়া রহিলেন । ক্ষীণ হইতে ক্ষীণতর হইয়া অবশেষে দিনান্তের শেষ আলোটুকু শীতশুক্লপক্ষের জ্যোৎস্লাজড়িত স্নান কুহেলিকায় মিশাইয়া গেল। বারান্দার সম্মুখে শুক্ল তৃতীয়ার চাদ কুয়াস ও হিম জাল ভেদ করিয়া অন্ধকার বনবীথির পরপার হইতে ভাসিয়া উঠিলেন, শীতের বাতাস ঝির ঝির করিয়া স্তব্ধ স্থির গাছের পাত কাপাইতে লাগিল, পল্লীবধূদের কোমল ওষ্ঠপুত মঙ্গল শঙ্খধ্বনি তখন থামিয়া গিয়া চারিদিক নিস্তব্ধ হইয়া গিয়াছিল। ব্যগ্র কণ্ঠে নীরদ জিজ্ঞাসা করিলেন “যদি আমি আমার কর্তব্য করিতে গিয়া অষ্ঠের ক্ষতি করিয়া ফেলি ? “রামচন্দ্র বনবাসে যাইবার সময় পুরবাসীর শোক দেখিয়াও কৰ্ত্তব্য ভ্রষ্ট হন নাই, নিজের হৃদপিণ্ড ছিড়িয়া ফেলিয়াও স্বাধী সহধৰ্ম্মিণীকে বর্জন পুৰ্ব্বক রাজ কর্তব্য পালন করিয়াছিলেন । নীরদকুমার! যার দেশে এখনও সে চিত্র রয়েচে সে কেন বৃথা সন্দেহ পোষণ করে কষ্ট পায় ! শিষ্য নীরদকুমার অত্যন্ত বিচলিত হইয়া উঠিয়া দাড়াইল । অধীর কণ্ঠে কহিল, “সন্ধ্যার সময় চলে যাচ্ছে আমি বিদায় নিই , নীরদ অপ্রকৃতিস্থ ভাবে প্রণাম করিয়া সন্ন্যাসীর আশীৰ্ব্বাদ শেষ হইবার পূৰ্ব্বেই চলিয়া গেল ; সন্ন্যাসী ঈষৎ বিস্ময়ের সহিত স্বাভাবিক গম্ভীর ভাবে উঠিয়া গৃহে প্রবেশ করিলেন । \రి: সন্ধ্যাবন্দন সারিয়া বাড়ির মধ্যে না গিয়া নীরদ কুমার সেদিন অনেকক্ষণ পৰ্য্যন্ত দক্ষি পোষ্যপুত্র। 86 (t ণের খোলা বারান্দায় পদচারণ করিয়া বেড়াইতে লাগিল । অনেকদিন পরে আজ আবার ষেন তাহার স্মৃতিসাগরের তলদেশ পৰ্য্যন্ত আলোড়িত হইয়া উঠিয়াছিল,--তাহার বৈচিত্র্যময়ী জীবননাটক আদ্যোপাস্ত একে একে অঙ্কের পর অঙ্কে অভিনীত হইতে হইতে অtজ এমন একটি জটিল সমস্তাপূর্ণ স্থানে আসিয়া পড়িয়াছে যে এখানে আটকাইয়া থাকা বা ইহার পাশ কাটাইয়া চলিয়া যাওয়াও আর সম্ভব নয় । মহাসমুদ্রে যে ভেল। ইচ্ছাস্রোতে ভাসিয়া যাইতেছিল অtজ হঠাৎ সে চড়ায় আসিয়া ঠেকিয়াছে, এখানকার আশ্রয় সবলে ঠেলিয়া নীরদ সারাজীবন ভাসিতেও সম্মত ছিল ; কিন্তু যে কঠিন আদেশের হস্ত তাহার বাহু ধরিয়! এই দিকেই আকর্ষণ করিয়! আনিতেছে তাহাকে বাধা দিবার যে শক্তি নাই ! নারদের সমুদয় শরীর পুনঃপুনঃ র্কাট দিয়া শিহরিয়া উঠিল । যাহার কাছে মুখ দেখাইবার একটুখানি মাত্র উপায় রাখে নাই ; যাহার প্রতি নিজের নিদারুণ ব্যবহার মনে করিলে জগতের সমুদয় অন্ধকার দিয়াও লজ্জিত মুখ ঢাকা পড়ে না,—কেমন করিয়া সে এই অপরাধের কালিমাখা মুখে তাহার সেই অবিচলিত স্থির অন্তর্ভেদী দৃষ্টির সম্মুখে গিয়া দাড়াইবে ? সে কি তাহাকে ক্ষম করিবে ? সে কখনও ক্ষমা করিতে পারে ? সে কি তাহার নিকট হইতে ক্ষমা পাইয়াছিল ? না না দ্বিধা নয়, লজ্জা নয়, বল চাই, মনে বল চাই, জোর করিয়া হৃদয়ের এ দুৰ্ব্বলতা ত্যাগ করিতেই হইবে,– অপরাধের দণ্ড মাথ৷ পাতিয়া লইতেই হইবে । যে অহঙ্কার এতদিন