পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৪৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, ষষ্ঠ সংখ্যা। কোনখানটায় তাহার অভাব ঘটতেছে। ধূলামলিন,কণ্টকক্ষত, ক্লান্ত চরণ, ঘুর্ণিত মস্তক, জীবন যুদ্ধে পরাভূতপ্রায় আজ সে বুঝিল, তাহার হৃদয় কেন ত্যাগের আনন্দ, ক্ষমার শান্তি উপভোগ করিতে,সহ করিতে পারে না। পৌরুষ,মনুষ্যত্ব,যশ সমস্তই যেন তাহার কাছে ছায়াবাজির মতন অস্পষ্ট, স্বপ্নের মতন মিথ্য হইয়া দেখা দেয়। তাহার চরিত্রের দৃঢ়তা, তাহার মানসিক বল, তাহার কৰ্ম্মের উদ্দীপনা তাহার নৈতিক উন্নতির “বর্ষ” প্রভৃতি লইয়। তাহার ভক্তগণের আন্দোলন,চারিদিকের অজস্র প্রশংসাবাদ ও ধন্তধ্বনি তাহার চিত্তে যেন জলন্ত লোহার বাড়ি মারে । সন্ন্যাসী নিঃশবে তাহীর শিথিল একখান হাত নিজের হাতের মধ্যে তুলিয়া লইয় আরো একটু কাছে সরিয়া আসিলেন। ঘরের ভিতর হইতে একটা ঘড়ি বাজিয়া আবার থামিয়া গেল । আকাশে তরল কোয়াশার পাতলা আবরণ সরাইয়া চাদ একবার কিছুক্ষণের জন্ত পূর্ণ কৌতুহলে উজ্জল মুখে চাহিয়া দেখিলেন । নীরদ এতক্ষণে কথা কহিল “গুরুদেব” ? গুরুদেব তাহার ঈষৎ স্থির মুখের দিকে দৃষ্টি করিয়া সকরুণ স্নেহে তাহার মাথায় হাত রাখিয়া কহিলেন “নীরদ”? “আমি যদি দুরে থেকে প্রায়শ্চিত্ত করি ? কাছে যাবার আমার যে উপায় নেই– ।” *তাতে কি প্রায়শ্চিত্ত ঠিক হবে নীরদ ? তাই কি কৰ্ত্তব্য ?” আবার সেই কৰ্ত্তব্য। অধীর হইয়া নীরদকুমার বলিয়া উঠিল। “অনেক ষে দেরি হয়ে গেছে—এখন এ ভুল কেমন করে শোধরাব তা যে কিছুতেই ভেবে পাচ্চিনে”। পোষ্যপুত্র । 8¢ ግ সন্ন্যাসী বলিলেন “নীরদ, মানবের প্রবৃত্তি মানবকে পদে পদে প্রলোভিত করিয়া থাকে, তাই বলিয়াই কি তাহার হাতে শিশুর মত আত্মসমর্পণ করিয়া দিবে ? বিলম্বে অষ্টায়ের মাত্রা বৰ্দ্ধিত হইতে থাকে-কমে না।” সন্ন্যাসী তাহার উত্তর প্রতীক্ষায় অনেকক্ষণ পর্য্যন্ত চুপ করিয়া রছিলেন। কোন উত্তর বা সাড়া না পাইয়া অবশেষে আবার বলিলেন-পথ খুঁজেছিলে,—সোজা সরল সত্যের পথ তোমার সম্মুখে । সাহস করে, দ্বিধাহীন হয়ে, কোন দিকে না চেয়ে চলে যাও। দেখবে গম্যস্থানে পৌছান কিছুই কঠিন নয়” । মুখ হইতে হাত সরাইয়া লইয়া অবরুদ্ধ স্বরে ক্ষীণকণ্ঠে নীরদ কহিল “কিন্তু আমি যদি কাহারও সুখের হস্তারক হই ? যদি কেহ আমার কার্য ফলে অমুখী হয় ?” “কৰ্ম্মন্তে বাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন, এই মহাবাক্য ভুলিও না ? কৰ্ত্তব্য কৰ্ম্মে দ্বিধা করিতে নাই ।” চাদের আলোয় যে মুখ মরণtহত রোগীর মুখের মতন মান দেখাইতেছিল, মুহুর্ভে তাহ নবীন স্বাস্থ্যের উজ্জলতায় দীপ্ত হইয়া উঠিল। সে তৎক্ষণাৎ ভূমিষ্ঠ হইয়। র্তাহাকে অনেকক্ষণ ধরিয়া প্রণাম করিল, দুই পায়ের ধূলা লইয়া মস্তকে দিল, তার পর উঠিয়া দৃঢ়স্বরে কহিল “আশীৰ্ব্বাদ করুন আপনার উপদেশে কর্তব্য পালনে যেন আর দ্বিধাযুক্ত না হই। ভাগ্যে যা হয় হোক ৷” সন্ন্যাসী তাহার শ্রদ্ধান্বিত মস্তকে দক্ষিণ হস্ত রাখিয়া প্রসন্ন কণ্ঠে কছিলেন, “ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন”।