পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৫০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

858 আরম্ভ করে নাই, সে সময়ে নগ্নতায় লজ্জা ভাব আদেী জন্মে নাই । শীত নিবারণের জন্ত, অথবা কেবলমাত্র সৌখিনতার খাতিরে, আপনার দেহযুষ্টিকে সাজাইয় সুন্দর করিবার জন্তই মানুষ প্রথমে কাপড় পরিতে আরম্ভ করে । এ অবস্থায়, শীতপ্রধান দেশে যেরূপ পোষাক প্রবর্তিত হওয়া স্বাভাবিক, গ্রীষ্ম প্রধানদেশে সেরূপ হওয়া সম্ভব নহে। ইংরাজ, জৰ্ম্মান, রুশ, এসকল জাতির লোকেরা শীত নিবারণের জন্তই আপনার সৰ্ব্বাঙ্গ একেবারে আবৃত করিয়া থাকে। আর আমরা, গ্রীষ্ম প্রধানদেশে বাস করি,—এত কাপড়চোপড়ে আমাদের স্বাস্থ্য ও সোয়াস্তি দুই নষ্ট হয় । সুতরাং ইংরাজের কোট প্যান্টালুন যেমন মুখকর, স্বাস্থ্যকর, ও সভ্যতার পরিচায়ক ; আমাদের ধুতি উত্তরীয়ও সেইরূপ সুখকর, স্বাস্থ্যকর, সুশোভন ও সুসভ্য। একসময়ে এ জ্ঞান আমাদের ভাল করিয়া জন্মায় নাই। ধুতি পরিয়া ইংরেজের সম্মুখীন হইতে, সেকালে আমাদের সঙ্কোচ বোধ হইত। আমরা আমাদের মাতা ও ভগ্নীর নিকটে খালি গারে বসিতে ও চলিতে কোনো কুণ্ঠ বোধ করিতাম না, কিন্তু সাহেব বিবি দেখিলেই গা ঢাকিবার জন্ত ব্যস্ত হইয়া পড়িতাম। এখন আর এরূপ ব্যস্ত হুইব না। একদিন আমরা ইংরেজের পোষাকেই সুরুচি ও শ্লীলতা দেখিতাম, আমাদের ধুতী বা শাড়ীতে সে মুরুচি বা অশ্লীলতা দেখি নাই। আজ এভাবও বদলাইয়া গিয়াছে ব। যাইতেছে। এখন ধুতির সুচারুতা প্যান্টালুনের অপেক্ষা বেশীই বলিয়া বোধ হয়, আর বিবিদের আঁটার্শটি পোষাকে ভারতী । আশ্বিন, ১৩১৭ দেহযষ্টিকে ঢাকিবীর ভাণ করিয়াও যে ঢাকিতে চাহে না, ইহা যতই লক্ষ্য করিতে আরম্ভ করিয়াছি, ততই আমাদের সাদাসিধে শাড়ীর ভিতরে কি শ্ৰী, কি শোভা, কি কমনীয় শ্লীলতা আছে, ইহা বুঝিতে পারিতেছি । মোট কথা এই—এসকল পোষাকপরিচ্ছদ, এসকল রীতিনীতি, এসকল আচারব্যবহার, ইহার বাহিরের বস্তু ও বিষয় সত্য, কিন্তু একান্ত বাহিরেরো নয়। বাহিরের ব্যাপার হইলেও, এসকলে প্রত্যেক জাতির ভিতরকার স্বভাব, আস্তরিক প্রকৃতি, এবং যুগযুগান্তরব্যাপী সাধন ও সভ্যতার মৰ্ম্ম প্রকাশ করিয়া থাকে। প্রত্যেক জাতির পোষাকপরিচ্ছদের ভিতরে তাহদের চিরন্তন সৌন্দর্য্যের আদর্শ দেখিতে পাওয়া যায়। সেইরূপ তাহদের খাওয়াদাওয়ায়, আচারপদ্ধতিতে তাহাদের ধৰ্ম্মের আদর্শ, তাহাদের ব্যবসাবাণিজ্যে তাহদের কৰ্ম্মের আদর্শ, এবং এই সকল বিবিধ আকারের চেষ্টাচরিত্রে, জাতীয় সভ্যতা ও সাধনার মৌখিক আদর্শ যে কি, ইহা ধরিতে পারা যায়। আর এই সকলের দ্বারাই বিভিন্ন সভ্যতার বিচার করিতে হয়। দুঃখের বিষয় এই, য়ুরোপের লোকেরা এখনো এভাবে, তুলনায় সমালোচনা করিয়া, সভ্যতার লক্ষণ নির্ণয়ে সমর্থ হয় নাই। তাই তাহদের শ্রেষ্ঠজনেরাও, য়ুরোপের বাহিরেও যে অতি উচ্চ ও উদার সভ্যতা আছে বা থাকিতে পারে, একথা সহজে বিশ্বাস বা স্বীকার করিতে পারেন না । এজষ্ঠ তারা এখনো সভ্যতার সত্যিকার মাপকাটিটা খুজিয়া পান নাই। শ্রীবিপিনচন্দ্র পাল ।