পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৫২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

d ०९ ভারতী | আশ্বিন, ১৩১৭ বন্দী। &> সেই সৈন্তশ্রেণীর মধ্য দিয়া চলিবার সময় . আমার মনে কেমন একটা লঘুত আসিল—মনে হইল, আমি যেন স্বাধীন —বন্দী নহি ! কিন্তু তারপর যখন সোপান অতিক্রম করিয়া ছোট দ্বার দিয়া অন্ধকার ঘরগুলার মধ্যে আসিয়া পড়িলাম—তখনি একটা নিরানন্দ অবসাদের ভাব আমাকে সম্পূর্ণ অভিভূত করিয়া তুলিল । প্রহরী আগাগোড়া সঙ্গে আসিল । আচাৰ্য্য মহাশয় দুই ঘণ্টা পরে আসিয়া সাক্ষাৎ করিবেন বলিয়া বিদায় লইলেন । র্তার আরো সব কি কাজ আছে ! সেইজন্ত ! অবশেষে অধ্যক্ষের ঘরে আসিয়া দাড়াইলাম । তাহারি হাতে প্রহরী আমাকে সঁপিয়া দিল ! আমার মনে একটা কৌতুকের হাসি দেখা দিল ! সঁপিয়া দিল—আমার প্রিয়জনের হাতে এত যত্নে আমি সমর্পিত হইলাম ! অধ্যক্ষ মহাশয় তখন বড় ব্যস্ত ছিলেন। প্রহরীকে বলিলেন, "একটু সবুর কর–আমি বুঝিয়া নিতেছি ।” সত্যই ত—একটা মানুষকে জমাখরচের খাতায়, তহবিল না মিলাইয়া, কি করিয়া জমা করেন। আর একজন হতভাগ্য বন্দীর .অদৃষ্ট লইয়। তিনি তখন অতিরিক্ত কুকিয়৷ পড়িয়াছিলেন । প্রহরী বলিল, “বেশ আমিও আমার কাগজপত্রগুলা একবার ভালো করিয়া গুছাইয়া লই!” একতাড়া কাগজ বাহির করিয়া প্রহরীও তখন ব্যস্ত হইয় পড়িল ! আমি ঘরের কোণে দাড়াইয়া ছিলাম ! লোহার মোট গরীদের মধ্য দিয়া বাহিরে আকাশ দেখা যাইতেছিল—রৌদ্র দেখিয়া মনে হইতেছিল, আকাশের গায় ; যেন কে রঙ, মাখাইয়া দিয়াছে। উজ্জ্বল নীল বর্ণের আকাশ ! আকাশের দিকে চাহিয়াছিলাম—একআধবার মনে হইতেছিল—এই একই আকাশের নীচে এখানে আমি দাড়াইয়া আছি —আমার স্ত্রী, আমার কন্যা তারাও আছে ! কিন্তু আর কি তাদের দেখিতে পাইব ? প্রহরী আমাকে পাশে একটা ছোট কুঠুরিতে লইয়া চলিল—অন্ধকূপের মত ছোট কুঠরি ! মোট লোহার জালে জানালা দুটি ঘেরা ! আমি জানালার ধারে আসিয়া বসিলাম ! কতক্ষণ বসিয়াছিলাম,মনে পড়েন । সহসা একটা অট্টহাসিতে ফিরিয়া চাহিলাম ! ঘরে আর একজন লোক ! বয়স পঞ্চাশের উদ্ধে — পিঠ ঝুকিয়া গিয়াছে মাথার চুল থাকিয়৷ গিয়াছে, অথচ বেশ মজবুত দোহার দেহ— চোখে মুখে কেমন একটা বিকট ভাবলোকটাকে সহসা দেখিলে প্রাণ যেন শিহরিয়া উঠে– তার সঙ্গ হইতে দূরে থাকিবার জন্য প্রবল আগ্রহ জন্মে ! লোকটাকে পূৰ্ব্বে আমি লক্ষ্যই করি নাই ! অথচ, সে এই ঘরে বসিয়াছিল ! আশ্চৰ্য্য ! এ কি তবে মৃত্যু—আজ এমন বেশে আসিয়া আমাকে দেখা দিয়াছে !