পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৫২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, ষষ্ঠ সংখ্যা। লোকটা কহিল, “দেখছি, তোমার ভাবখান ! কি এমন ভাবে মজ গুল হে যে, একটা লোককে চোখে দেখারও অবসর পা ও না ! তোমার নাম কি ?” আমি কথা কহিলাম না। দিকে চাহিয়া রহিলাম ! সে কহিল, “কি হে, আমাকে দেখে বুঝি অবাক হয়ে গেছ ! আমি একটা লগেজ,— ষ্টেশনের ছাপ-মারা হয়ে পড়ে আছি ! গাড়ীতে তুলে নিলেই হয় ।” লোকটা বেশ রসিক ত! আমি কহিলাম, “তার অর্থ ?” হো হো করিয়া সে হাসিয়া উঠিল— কহিল, “এর সরল অর্থটুকু এমন কি কঠিন যে, বুঝলে না ? অার ছয় সপ্তাহ পরে আমাকে ভবপারে পাঠাবে-তারি জন্ত আজ “লগেজ বুক' হয়ে রইলাম! অর্থাৎ ছয় ঘণ্ট। পরে তোমার যে দশা, ছয় সপ্তাহ পরে আমারো তাই ! এমন দিনে, এমন বন্ধুর দিকেও তুমি ফিরে চtছ না ?” ঠিক কথা ! আমার দেহের শিরাগুলায় যেন টান পড়িল ।

  • লোকটী কহিল, "চুপ করে ভেবে আর কি হবে, বল, বন্ধু ? --তার চেয়ে আমার কাহিনীটা বলি, শোন—মন্দ লাগবে , না ! সময়টুকুও বেশ কেটে যাবে!”

সে বলিতে আরম্ভ করিল--"আমরা কয়পুরুষ ধরিয়া চুরি বিদ্যায় বেশ দক্ষতা লাভ করিয়াছি। এমন শাণিত বুদ্ধি ফালিকাঠের চাপে ঝরিয়া মরিবে ! অদৃষ্ট, বন্ধু ! ছয় বৎসর বয়সের সময় মা-বাপ হারাইয়। বসিলাম । লোকের পকেট কাটিয়া, নিৰ্ব্বোধ শুধু তার চয়ন—বন্দী। ( O ඵ ভুলাইয়া বেশ দুইপয়সা উপার্জন করিতে লাগিলাম ! হাজার হউক, ংশগত বিদ্যা ত ! শীতের দুরন্ত রাত্রে, বরফে যখন পথ-মাঠ ভরিয়া যাইত, তখন শুধু পায় পথ চলাও রীতিমত অভ্যাস হইয়া গেল। তার পর ষ্টেশনে, হোটেলে, ট্রেণে, লোকের পকেট কাটিতে দড় হইয়া উঠিলাম ! পনেরো বৎসর বয়সে প্রথম ধরা পড়ি । কয়েক ঘা বেত ও দুই চারি দিনের জন্ত জেল হইল ! জেলের ফেরত হইলে, আমার প্রতিপত্তি বাড়িয়া গেল ! দলের সর্দার হইয়া উঠিলাম ! তারপর বড় বড় কাজে হাত দিলাম । সহরের বিখ্যাত জহরতওয়ালার দোকানে দল লইয়া উপস্থিত হইলাম ! দোকান-ঘর উজাড় করিয় ফেললাম—দুইটা দ্বারবানও প্রাণ দিল । তথন আমার দন্তও বাড়িয়া গেল। দলের একট। হতভাগ স্বার্থপর বিশ্বাসভঙ্গ করিয়া ধরাইয়া দিল । সাত বৎসর জেল ঘুরিয়া আসিলাম । স্পষ্ট প্রমাণ তেমন কিছু ছিল না—নহিলে জেল হইতে হয়ত আর বাহির হইতে পাইতাম না । রাগ পড়িয়া গেল—সেই স্বার্থপর বিশ্বাসঘাতকটার উপর । যখন বিচার শেষ হয়—সে তখন আদালতের বাহিরে দাড়াইয়াছিল । তার প্রতি শুধু একটা রক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করিয়া গেলাম। সে দৃষ্টিতে আগুনের হস্কা ছিল—লোকটার হাড়ে হাড়ে সে জাল বিধিয়াছিল । ভয়ে তার মুখ শুখাইয়। গেল ! সাত বৎসর দেখিতে দেথিতে কাটিয়া গেল । তার পর আবার একদিন জেলের বাহিরে আসিয়া দাড়াইলাম !