পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৪শ বর্ষ, প্রথম সংখ্যা। —আর, এই সব অলস ও কাপুরুষ দর্শকের সারি । আমার সারা দেহে যেন আগুন জলিতেছিল ! গা কঁাপিতেছিল ! পী টলিতেছিল ! প্রহরী আমাকে ধরিয়া কাঠগড়ায় পুরিয়া দিল । বাহিরের বাতাসে, যেন অনেকখানি শ্রাস্তি, অনেকখানি দুশ্চিন্তা কাটিয়া গিয় ছিল। মাথার উপর বিস্তৃত নীল আকাশ–রেীদ্রের উষ্ণ মধুর স্পর্শ, চারিধারে পাখীর কোলাহল, গাছের ছায়া—এ পৃথিবী এত সুন্দর ত কখনো দেখি নাই ! তার পর, আবার বিচারগুহের এই বদ্ধ বায়ু জীবনের পর মৃত্যু ও বুঝি এমনি ভীষণ । আমাকে দেখিয়া চারিধারে যেন একটা কোলাহল পড়িয়া গেল ! চুপি-চুপি কথা, কাগজ-পত্র উণ্টনো, চলা-ফেরা,—সকলের একটা সুবিকট মিশ্র রাগিণী যেন জাগিয়া উঠিল ! এতক্ষণ অধীরভাবে প্রতীক্ষা করিয়া সকলে কষ্ট পাইতেছিল, আমি আসিতে যেন লোকগুলা আরাম পাইয়। বাচিল । কি নির্লজ্জ হৃদয়হীনতা ! একজন ফাসিকাঠে প্রাণ দিতে যাইতেছে, আর, এই অলস পশুর দল তাহ দেখিয় আমোদ করিতে আসিয়াছে ! চারিধার শাস্ত, নিস্তব্ধ! ঝড়ের পূৰ্ব্বে প্রকৃতি যেমন শাস্ত হয়, তেমনি ! এখনি ঝড় বহিবে । ভীষণ ঝড়—আমার অস্থিগুলাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করিয়া, আমার শিরাওলাকে টুকুর টুকুর করিয়া ছিড়িয়া, আমার প্রাণটাকে সহস্র খণ্ডে বিদীর্ণ করিয়া, তবে এ ঝড় থামিবে । আজ আমার অপরাধের দণ্ডবিধান হইবে। দও! হায়, কে কার দণ্ড দিবে। বন্দী। ةوا কে কার অপরাধের বিচার করিবে ! আমি নিস্তব্ধভাবে প্রতীক্ষা করিতেছিলাম । আমার হৃৎপিণ্ড তালে তালে নাচিতেছিল ! কি এক গভীর বিরাট স্পন্দন ! তার ধবকৃ-ধবকু শব্দটা বন্দুকের শব্দের মতই ভীষণ মনে হইতেছিল ! তখন আমার মনে ভয় ছিল না ! ঘরের জানালা গুলা খোলা ছিল । আমি তাহারি মধ্য দিয়া আকাশের দিকে চাহিয়৷ ছিলাম । আকাশের গায় কতকগুল ছোট পাখী উড়িয়া বেড়াইতেছিল, বাহির হইতে একটা মিশ্র কোলাহল ভাসিয়া আসিতেছিল, আর শাস্ত মুকু বায়ু, মাতার কল্যাণহস্তের মত, আমার শ্রাপ্ত ললাটে শান্তি বহিপ্পা আনিতেছিল । জজের নিদ্রাকাতর নম্বনের প্রতিও দৃষ্টি পড়িতেছিল ! আমি ভাবিলাম, কেন, এ অভিনয় ! বাহিরে দোকানীর দল হাসিতেছিল, গল্প করিতেছিল ! তাহার, আমাকে ভুলিয়া, আজ হাসি-গল্প লইয়া রহিয়াছে ! কি নিৰ্ব্বোধ, মুর্থ, এই দোকানীর দল ! চারিধারে এত আনন্দ, এত শোভা ! তাহার মধ্যে মৃত্যুর কথা ভাবা নিষ্ঠুরতা— পাপ ! এই স্নিগ্ধ বায়ু, এই প্রসন্ন দীপ্ত স্বৰ্য্যকিরণ, ইহার মধ্যে মৃত্যু-চিন্তা, নিতান্ত অসঙ্গত, অশোভন ! স্বৰ্য্যরশ্মির মত অtশার আলোকচ্ছটা মাঝে মাঝে নিরাশতিমির হৃদয়টাতে আলো দিতেছিল--আহাঁ, যদি আজ মুক্তি পাই ! আমার উকিল বলিলেন, “আশা আছে!” আমি মৃদু হাসিয়া কহিলাম, “ভালো কথা ।”