পাতা:ভারতী বৈশাখ-আশ্বিন ১৩১৭.djvu/৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

مي{وك উকিল বলিলেন, “একটা জিনিষ—হঠাৎ কাজটা হইয়া গিয়াছে, এমনি আমি প্রমাণ করিয়াছি -- ফাসি ত হইবেই না ; তবে আজন্ম বন্দী—দেখা যাক্ !” আমি কহিলাম, “কারাগৃহে, বন্দী ! তার চেয়ে মৃত্যু ভালো!” ই, মৃত্যুও ভালো! আমি বাহিরের দিকে চাহিলাম ! গাছের ডালে বসিয়া একটা পার্থী ফলে ঠোকর মারিতেছিল ! কি স্বচ্ছ, লঘু, উহার আনন্দটুকু! আঃ, আমি যদি আজ ঐ পার্থীটার মত স্বাধীন হইতাম ! তথন জজের রায় পড়া হইতেছিল—আমি সেদিকে লক্ষ্য করি নাই ! জীবন বা মৃত্যু, দুইটর কথাই তখন ভুলিয়া গিয়াছিলাম। সহসা গুনিলাম, আমার ফাসি । মাথায় বিন্‌ বিন্‌ করিয়া ঘাম হইল! চোখের সম্মুখে একটা কিসের পর্দা পড়িয়া গেল – অমি কাঠগড়ায় ঠেস দিয়া দাড়াইলাম ! জজের মনে, বুঝি, দয়া হইল। তিনি কছিলেন, “তোমার কিছু বলিবার আছে ?” বলিবার অনেক কথাই ছিল । কিন্তু কথা বাহির হইতেছিল না । জিবটা জড়াইয়া গিয়াছিল ! দুই হাতের মধ্যে আমি মুখ ঢাকিলাম । লোকগুলা কোলাহল করিতে করিতে বিচার-গৃহ পরিত্যাগ করিতেছিল— তাদের পায়ের শব্দ আমি শুনিতেছিলাম ! এতক্ষণে তাহারা ৰাচিয়াছে ! কাজকৰ্ম্ম, বিলাস-বিশ্রাম সব ত্যাগ করিয়া বেচারার সারাক্ষণ প্রতীক্ষা করিয়া থাকিত, আজ তাদের ছুটি দিয়াছি! ধন্ত, আমি ! অনেকক্ষণ পরে আমার স্বর ফুটিল। আমি কহিলাম, “হুজুর, একটু দয়া করুন— আজন্ম ভারতী । বৈশাখ ১৩১৭ মৃত্যুট যেন শীঘ্র হয়, আর আমার বলিবার কিছু নাই!” সমস্ত জগতের উপর আমার অভিমান হইয়াছিল! কিন্তু, জগতের ত তাঁহাতে এতটুকু ক্ষতি নাই ! সে চিরদিনকার মতই হাসিবেখেলিবে! আমি যে আজ তার ক্রোড়চু্যত হইয়া চলিলাম, এ অভাব কি কখনো সে অনুভব করিবে ! হায়, এমন সুন্দর পৃথিবী, এত সে নিৰ্ম্মম ! কারে জন্য এতটুকু মায়া নাই, স্নেহ নাই,যেন নিম্পদ, কঠিন জড়পি গুট পড়িয়া রহিয়াছে ! এই জগতে কোনমতে টি-কিয়া থাকার নামই জীবন ! ইহার চেয়ে মৃত্যু কি এতই কঠোর ! প্রহরীরা আমাকে বাহিরে লইয়া আসিল । তখনো বাহিরে উৎসুক দর্শকের দল আমাকে দেখিবার জন্ত পাগল ! এই সব হৃদয়হীন পগুগুলার শিরে বাজ পড়ে না ? হা ভগবান ! প্রেত, পশুর দল, সব ! বাহিরে আসিয়া বুঝিলাম, কি এ পরিবর্তন ! যখন বিচার-গৃহে আসিয়াছিলাম, তথন সকলেরি মত আমি জীবন্ত ছিলাম— এ জগতেরি একজন ! অার এখন, এ যেন আমার মৃতদেহটা ভৌতিকবলে চলিয়াছে ! আমি, যেন, এখন, আর এ জগতের নহি ! এই পাখীর গান, স্বর্য্যের কিরণ— ইহারা আজ আমার জন্ত নহে ! এই নদীর জল, নীল আকাশ, আর সকলের জন্য তেমনি ঠিক আছে কেবল আমিই ইহাদের মধ্য হইতে ভ্রষ্ট, চু্যত তারার মত খসিয়া পড়িয়াছি। ঐ ছোট ছোট ফুলগুলি, ঐ গাছের ছায়াটুকু —আজ আমার জন্ত আর কিছু নয় । এ সবে আমার আজ কোন.অধিকারও নাই !