পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১৯১৬ সালের জানুয়ারি মাস তখন। সকালে কলেজ লাইব্রেরিতে বসে পড়ছি এমন সময়ে খবর পেলাম জনৈক ইংরেজ অধ্যাপক আমাদের ক্লাসের একটি ছেলেকে মারধোর করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আমাদের ক্লাসের কয়েকটি ছেলে মিঃ ওটেনের ঘরের সামনের বারান্দায় পায়চারি করছিল, এতে বিরক্ত হয়ে মিঃ ওটেন তাঁর ঘর থেকে বেরিয়ে কয়েকজন ছেলেকে জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন। ক্লাসের প্রতিনিধি হিসেবে আমি তৎক্ষণাৎ অধ্যক্ষ মিঃ এইচ. আৱ. জেমসের কাছে গিয়ে প্রতিবাদ জানালাম, বললাম— যে-ছেলেদের মিঃ ওটেন অপমান করেছেন তাঁদের কাছে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। অধ্যক্ষ বললেন, তাঁর পক্ষে মিঃ ওটেনকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা সম্ভব নয়, কারণ মিঃ ওটেন ইণ্ডিয়ান এডুকেশনল সার্ভিস-এর লোক। তাছাড়া, তিনি বললেন, মিঃ ওটেন তো কাউকেই মারধোর করেননি, শ‍ুধ‍ু হাত ধরে সরিয়ে দিয়েছেন—এতে অপমানিত বোধ করার কিছু নেই। জবাবদিহি শুনে আমরা মোটেই খুশি হতে পারলাম না। পরের দিন ছাত্ররা ধর্মঘট করল। অধ্যক্ষ বহু চেষ্টা করেও ধর্মঘট ভাঙতে পারলেন না, এমন কি মৌলবী সাহেবের প্রাণপণ চেষ্টাতেও মসলমান ছেলেৱা ধর্মঘট থেকে বিরত হল না। স্যর পি. সি. রায় এবং ডক্টর ডি. এন. মল্লিক—এদের অনুরোধেও কেউ কর্ণপাত করল না। যেসব ছেলেরা ক্লাসে অনুপস্থিত ছিল অধ্যক্ষ তাদের প্রত্যেককে জরিমানা করলেন।

প্রেসিডেন্সির মতো কলেজে এ রকম জোরালো একটি ধর্মঘটের খবর শহরের চতুর্দিকে খুব উত্তেজনার সৃষ্টি করল। ধর্মঘটের ঢেউ যখন আস্তে আস্তে আরো কয়েক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ল কর্তৃপক্ষ সন্ত্রস্ত হয়ে উঠলেন। একজন অধ্যাপক আমাকে খুব স্নেহু করতেন, তিনি

৭(৪৪)
৯৭