পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মনে করি কি না। জবাবে আমি বললাম, অবশ্যই অন্যায় হয়েছে, কিন্তু ছাত্রদের উপর যথেষ্ট অত্যাচার হয়েছিল বলেই তারা অন্যায়টা করেছিল। এরপর গত কয়েক বছর ধরে প্রেসিডেন্সি কলেজে শ্বেতাঙ্গ অধ্যাপকদের অত্যাচারের কাহিনী ধারাবাহিকভাবে বলে গেলাম। আমার অভিযোগ অকাট্য হলেও, অনেকেই মনে করলেন, মিঃ ওটেনকে মারা যে অন্যায় হয়েছে একথাটা বিনাশর্তে মেনে না নিয়ে আমি নিজের ক্ষতি করলাম। আমার কিন্তু মনে হল, ফলাফল যাই হোক না কেন আমি উচিত কাজই করেছি।

শেষ পর্যন্ত সুবিচার পাওয়া যেতে পারে, এই আশায় তখনকার মতো কলকাতায় থেকে গেলাম। যথাসময়ে কমিটি রিপোর্ট পেশ করল। রিপোর্টে ছাত্রদের স্বপক্ষে একটা কথাও ছিল না—এবং তাতে একমাত্র আমার নামই উল্লেখ করা হয়েছিল। আমার শেষ ভরসাটুকুও গেল। ইতিমধ্যে কলকাতার রাজনৈতিক আবহাওয়া বেশ ঘোরালো হয়ে উঠেছিল। বহুলোককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। এদের মধ্যে প্রেসিডেন্সি কলেজের কয়েকজন বিতাড়িত ছাত্রও ছিল। আমার দাদারা এইসব দেখে অত্যন্ত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন। আলাপ-আলোচনার পর তারা মত দিলেন কোনো উপলক্ষ ছাড়া কলকাতায় থাকা মানেই বিপদ ডেকে আনা, কাজেই আমার কটকে চলে যাওয়াই ভালো—সেখানে গোলমালের আশঙ্কা অনেক কম, জায়গাটাও নিরাপদ। রাত্রে ট্রেনে বাঙ্কের উপর শ‍ুয়ে গত কয়েক মাসের ঘটনাবলীর কথা ভাবছিলাম। লেখাপড়া তো এখানেই শেষ, ভবিষ্যৎও অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ঢাকা। কিন্তু এজন্য আমি যে দুঃখিত ছিলাম তা নয়, আমি যা করেছি তার জন্য আমার মনে বিন্দুমাত্রও অনুশোচনা ছিল না। বরং কর্তব্য পালনের আনন্দে আমার মনটা ভরে ছিল। একটা মহৎ

১০১