পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শ‍ুনেছি তারপর আর কখনো আমার সমুদ্র ভ্রমণের ইচ্ছে হয়নি। তখনকার দিনে অত বিপদ আপদের মধ্যে আমার পিতা তাঁর পৈতৃক ভিটে ছেড়ে ভাগ্যান্বেষণ করতে যে এতদূর আসতে পেরেছিলেন তাতেই বোঝা যায় তাঁর বুকের পাটা কতখানি ছিল। এই দুঃসাহসিকতার পুরস্কারও তিনি পেয়েছিলেন, আমার যখন জন্ম হয় ততদিনে তিনি বেশ প্রতিপত্তি করে নিয়েছেন এবং উড়িষ্যার আইনব্যবসার ক্ষেত্রে বলতে গেলে তিনি শীর্ষ স্থানটি অধিকার করেছিলেন।

কটক শহরটি আয়তনে বিশেষ বড় নয়, লোকসংখ্যাও মাত্র ২০,০০০ হাজারের কাছাকাছি। কিন্তু তা হলেও কতকগ‍ুলি বিশেষত্বের জন্য কটক ভারতবর্ষের একটি প্রধান শহর। কলিঙের হিন্দুরাজাদের আমল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত কটকের ইতিহাস এক অবিচ্ছিন্ন মর্যাদার দাবি করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে কটকই ছিল উড়িষার রাজধানী এবং পুরীর বিখ্যাত জগন্নাথদেবের মন্দির, কোনারক, ভুবনেশ্বর ও উদয়গিরির জগৎবিখ্যাত শিল্পনিদর্শন কটকেরই দান। তাছাড়া কটক যে শ‍ুধু, উড়িষ্যার বৃটিশ সরকারেরই প্রধান দপ্তর ছিল তা নয়, উড়িষ্যার বহু সামন্তরাজাদেরও শাসনকেন্দ্র ছিল। সব মিলিয়ে এখানকার পরিবেশ শিশুমনের সুস্থ সবল হয়ে গড়ে ওঠার অনুকুলই ছিল। শহরের এবং গ্রাম্যজীবনের—দুয়েরই সুবিধে কটকে পাওয়া যেত।

ধনী না হলেও আমাদের পরিবারকে সঙ্গতিসম্পন্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে ফেলা চলত। কাজেই অভাব অনটনের অভিজ্ঞতা কখনো আমার হয়নি, আর অভাবের তাড়নায় লোভ, স্বার্থপরতা ইত্যাদি যেসব চানসিক দুর্বলতা অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে সেসব সংকীর্ণতাও আমার