পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গলা, প্যারেডের মাঠে তার মুখে একটা ভেংচি লেগেই আছে। কিন্তু তার মনটা একেবারে খাঁটি। উদ্দেশ্য তার কখনো এতটুকু মন্দ থাকত না, দলের লোকেরা সেটা জানত, তাই র‍ুক্ষ ব্যবহার সত্ত্বেও তার প্রতি সকলের প্রীতি ছিল অক্ষ‍ুন্ন। ক্যাপ্টেন গ্রের জন্যে জান কবুল—এই ছিল তখনকার মনোভাব। যখন সে আমাদের হাতে নিয়েছিল তখন ফোর্ট উইলিয়মের অন্যান্য অফিসারেরা বলেছিল যে আমাদের দ্বারা পল্টনগিরি কখন হবে না। ক্যাপ্টেন গ্রে দেখিয়ে দিল যে তাদের হিসাব কত ভুল। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষিত লোক হওয়ায় আমরা সহজেই শিখে নিলাম। সাধারণ সৈনিকের যা শিখতে লাগত কয়েকমাস, সেটা কয়েক সপ্তাহেই ধাতস্থ হয়ে যেত। তিন সপ্তাহের চাঁদমারি চর্চার পর আমাদের সঙ্গে ইন‍্স্ট্রাক্টরদের এক প্রতিযোগিতা হল এবং তাতে ইন‍্স্ট্রাক্টররা হেরে ভূত হয়ে গেল। তারা বিশ্বাসই করতে চাইল না যে আমরা আগে কখনো রাইফেল ছুঁইনি। একদিন প্লাটুন—ইন‍্স্ট্রাক্টরকে জিগগেস করেছিলাম যে সৈনিক হিসাবে আমাদের সম্বন্ধে তার সত্যিকারের ধারণাটা কী। উত্তরে সে বলেছিল যে প্যারেডে আমাদের খুঁত ধরা শক্ত, কিন্তু আমাদের লড়াই-এর হাড় কতখানি মজবুত সেটা সত্যিকারের যুদ্ধ ছাড়া বোঝা যাবে না। আমাদের র‍ূপান্তর দেখে ও. সি. খুশি হয়েছিল, অন্তত ক্যাম্প যখন ভাঙল তখন তাই বলেছিল আর যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধি সভায় আমরা বাঙলার লাটকে গার্ড অফ অনার দিলাম সেদিন লাটসাহেবের মিলিটারি সেক্রেটারি আমাদের প্যারেড দেখে অভিনন্দন জানানোতে তার গর্বের অবধি ছিল না। নববর্ষের প্রোক্ল্যামেশন-প্যারেডে যেদিন আমরা উত‍‌রে গেলাম সেদিন তার খুশির মাত্রাটা আরো বেশি।

সৈনিক-জীবনে যেদিন এত আনন্দ পেতাম সেদিন থেকে কতদূর

১১৬