পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাদের বাপমায়ের সঙ্গে মিশতে দেখেছি তাদের মনে মনে হিংসে না করে পারিনি। আমার মন একটু স্পর্শকাতর, তাই বাপমায়ের এই আপাত নিস্পৃহতা আমাকে বেদনা দিয়েছে। শুধু যে বাপমায়ের কাছ থেকে ভয়ে ভয়ে দূরে থাকতে হত বলেই আমার দুঃখ ছিল তা নয়, আমার বড় অনেক ভাইবোন থাকায় নিজেকে খুঁজে পেতেই যেন কষ্ট হত। একদিক দিয়ে এতে অবিশ্যি ভালো বই মন্দ হয়নি। দাদাদের মতো হতে হবে—এই সংকল্প নিয়ে আমি বড় হয়ে উঠেছি। নিজের সম্বন্ধে বিশেষ উঁচু ধারণা আমার কখনো ছিল না, তাই সব কাজেই আমার অত্যন্ত সাবধানে চলা অভ্যাস। আর যত কঠিন কাজই হোক না কেন, কখনো ফাঁকি দেবার কথা আমার মনে হয়নি। তাছাড়া, আমার অবচেতন মনে এ ধারণাটা বদ্ধমূল হয়ে গিয়েছিল যে সাধারণ লোকের পক্ষে কৃতকার্যতা লাভের একমাত্র উপায় কঠিন পরিশ্রম ও নিষ্ঠা।

বড় পরিবারে মানুষ হওয়া অনেক দিক দিয়েই বিড়ম্বনা। ছেলেবেলায় যে জিনিসটি অত্যন্ত দরকার—ব্যক্তিগত মনোযোগ—বড় পরিবারের লোকারণ্যে সেটা কোনোমতেই সম্ভব হয় না। তার উপরে অনেকে একসঙ্গে থাকলে নিজের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে সজাগ থাকবার সুযোেগ ঘটে না, ফলে ব্যক্তিত্ব গড়ে উঠতে পারে না। বড় পরিবারের সুবিধেও অবশ্য আছে। অনেকের মাঝে থাকার ফলে স্বভাব সহজেই সামাজিক হয়ে ওঠে—আত্মকেন্দ্রিকতা প্রশ্রয় পায় না। আমাদের বাড়িতে বেশি লোক বলতে শুধু আমার ভাইবোনেরাই নয়, খুড়তুতো, পিসতুতো, মামাতো ভাইবোন আর কাকা, মামা ইত্যাদি মিলে বেশ একটা বড় অঙ্ক দাঁড়াত। এর উপরে আত্মীয়স্বজনের ভিড় তো প্রায় লেগেই থাকত। আর ভালো হোটেলের অভাবেই