পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পেপার, লেখাটাও আমার ভালোই হয়েছিল। পরে ভালো করে নকল করব মনে করে প্রথমে কাটাকাটি করে একটা খাড়া করেছিলাম। কিন্তু সময়ের হিসেবটা এমন নির্বিবাদে ভুলে গিয়েছিলাম যে যখন ঘণ্টা পড়ল তখন অর্ধেকের বেশি নকল করা বাকি। কিন্তু তখন কোনো উপায় নেই—খাতার মায়া ত্যাগ করে বসে আঙুল কামড়ানো ছাড়া আর উপায় রইল না।

সকলকে জানালাম যে পরীক্ষা ভালো দিতে পারিনি, প্রথম ক’জনের মধ্যে স্থান পাওয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। ট্রাইপসের পড়াশনোর দিকে মন দেওয়া সাব্যস্ত করলাম। কাজেই যেদিন রাত্রে লণ্ডনে বসে এক বন্ধুর টেলিগ্রাম পেলাম—“অভিনন্দন জানাচ্ছি, মর্নিং পোষ্ট দেখো”—সেদিন কেমন আকাশ থেকে পড়েছিলাম তা কল্পনা করা শক্ত নয়। কী মানে বুঝে পেলাম না। সকালে উঠেই এক কপি মনিং পোস্ট জোগাড় করে দেখি আমি চতুর্থ হয়েছি। আনন্দের অবধি রইল না। দেশে এক কেব‍্ল চলে গেল তৎক্ষণাৎ।

এবার এক নতুন সমস্যা উদয় হল। এই চাকরি নিয়ে কী করি? সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষায় জলাঞ্জলি দিয়ে মোটা মাইনের গদিতে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে জীবন কাটিয়ে দেব? নতুন কিছু নয়, পুরনো কাহিনী। তরুণ বয়সে বড়ো কথা বলে অনেকেই, বয়স হলে কাজ করে অন্যরকম। কলকাতার একটি ছেলেকে চিনতাম যার মুখে কলেজজীবনে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের বাণী ছাড়া অন্য কথা শোনা যেত না, পরবর্তী জীবনে সে বড়লোকের মেয়ে বিয়ে করেছে, এখন সিভিল সার্ভিসের মস্ত কর্ণধার। বোম্বই-এর এক বন্ধু, লোকমান্য তিলকের উপস্থিতিতে শপথ করেছিল যে আই. সি. এস পরীক্ষায় পাশ করলে চাকরি ছেড়ে দেশের কাজে নামবে। কিন্তু জীবনের শুরুতেই আমি

১৩৪