পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বৎসরের মধ্যে এদেশে স্বায়ত্তশাসন অনিবার্য। কিন্তু আমার জীবন নব্য শাসনব্যবস্থায় সহনীয় হইবে কি না ইহা আমার জিজ্ঞাস্য নহে। অপরপক্ষে আমার ধারণা যে চাকুরিতে বহাল থাকিয়াও আমি কিছু কিছু দেশের মঙ্গলসাধন করিতে পারিব। আমার প্রধান প্রশ্ন নীতিগত। বর্তমান অবস্থায় কী আমাদের এক বিদেশী আমলাতন্ত্রের বশ্যতা স্বীকার করিয়া এক কাঁড়ি টাকার জন্য আত্মবিক্রয় করা সমীচীন? যাহারা ইতিমধ্যেই চাকুরিতে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে বা চাকুরি গ্রহণ করা ভিন্ন যাহাদের গত্যন্তর নাই তাহাদের কথা স্বতন্ত্র। কিন্তু আমার অবস্থা অনেক দিক দিয়া সুবিধাজনক থাকিতে আমার কী এত শীঘ্র বশ্যতা স্বীকার করা উচিত? যেদিন আমি চাকুরির প্রতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর করিব সেদিন হইতে আমি আর স্বাধীন মানুষ থাকিব না ইহাই আমার বিশ্বাস।

“যদি আমরা উপযুক্ত মূল্য দিতে প্রস্ত‌ুত থাকি তবে দশ বৎসরে কেন তাহার পূর্বেই স্বায়ত্তশাসন আমরা অর্জন করিতে পারিব। সেই মূল্য আত্মত্যাগ ও ক্লেশবহন। কেবল এই আত্মত্যাগ ও দুঃখবরণের ভিত্তিতেই জাতীয় সৌধ প্রতিষ্ঠিত হইতে পারে। যদি আমরা সকলে নিজের নিজের চাকুরির খুঁটি আঁকড়াইয়া বসিয়া থাকি, নিজের স্বার্থের অন্বেষণেই প্রবত্ত থাকি, তবে পঞ্চাশ বৎসরেও আমাদের স্বায়ত্তশাসন মিলিবে না। প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব যদি না হয় অন্তত প্রত্যেক পরিবারকে আজ দেশমাতার চরণে অর্ঘ্য আনিয়া দিতে হইবে। পিতৃদেব আমাকে এই আত্মত্যাগ হইতে রক্ষা করিতে চাহেন। আমাকে আমারি স্বার্থে এই দঃখকষ্ট হইতে বাঁচাইবার জন্য তাঁহার ইচ্ছার মধ্যে যে স্নেহ উদ্বেল হইয়া উঠিয়াছে তাহার মূল্য বুঝিব না এমন নিষ্কর‍ুণ আমি নহি। তাঁহার স্বভাবতই আশঙ্কা হয় বুঝিব,

১৪৩