পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জ্ঞানের অন্বেষণে যোগ দিতে রাজী নই, আমার এমন ধর্ম চাই যাকে জীবনে পাওয়া যায়।

জীবনে যে আদর্শকে পাওয়া যায় না, বাস্তব জীবনে যার প্রয়োগ নেই, তাকে ত্যাগ করার দিকেই আমার প্রবণতা। কিছুকাল শঙ্করের মায়াবাদে আচ্ছন্ন হয়েছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতে শান্তি মিলল না, কারণ শঙ্করের তত্ত্ব জীবনে পাবার নয়। অন্য দর্শনের দিকে মুখ ফেরাতে হল। অবশ্য খৃস্টীয় দর্শনের দিকে যাবার প্রয়োজন হয়নি। ভারতীয় দর্শনের মধ্যে বহু, ধারা আছে যেগুলি জীবনকে সার বলেই জানে, মায়া বলে মানে না। যেমন দ্বৈতাদ্বৈতবাদে পরমাত্মাকে এক বলে বর্ণনা করে জগৎসংসারকে বলা হয়েছে তাঁরি প্রকাশ। রামকৃষ্ণের মতেও পরমাত্মা অর্থাৎ এক, জীবাত্মা অর্থাৎ বহু, উভয়ই স্বীকৃত হয়েছে। সৃষ্টির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে অবশ্য বহু মতের সৃষ্টি। কোনো মতানুসারে জগৎসংসার হচ্ছে আনন্দের প্রকাশ। অন্যান্য মতে সৃষ্টি হচ্ছে ঈশ্বরের লীলামাত্র। এক ও পরম অর্থাৎ ঈশ্বরের প্রকৃতিকে মানুষের ভাষায় ও প্রতিমায় প্রকাশ করার বহুতর চেষ্টা হয়েছে। বৈষ্ণবেরা বলেন ঈশ্বর প্রেমস্বরূপ। শাক্ত মতে তিনি শক্তিস্বর‍ূপ; অন্যান্য নানা মতে তিনি জ্ঞানস্বর‍ূপ অথবা আনন্দস্বর‍ূপ। দীর্ঘকাল ধরে হিন্দ দর্শনে পরমাত্মাকে সচ্চিদানন্দ বলে বর্ণনা করা চলছে। অবশ্য ন্যায়নিষ্ঠ পণ্ডিতেরা বলেন যে পরমাত্মা অনির্বচনীয়, তাঁকে বাক্যে প্রকাশ করা যায় না। এবং জানা যায় যে পরমাত্মা সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলে বুদ্ধ চিরকালই নীরব থাকতেন। মানুষের সীমাবদ্ধ বুদ্ধি দিয়ে পরমাত্মাকে জানা অসম্ভব সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। বস্তুকে আমরা নৈর্ব্যক্তিকভাবে দেখতে পাই না, তার সত্যকার প্রকৃতি আমরা জানি না কেননা আমাদের দৃষ্টি আমাদেরই

১৫০