পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিভিন্ন অণুপরমাণুর এলোমেলো সংযোগ নয়। তাছাড়া বাস্তবকে আমি যেভাবে বুঝি তাকে এর চেয়ে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। বস্ত‌ুতপক্ষে এই ব্যাখ্যা হচ্ছে বুদ্ধি ও নীতির প্রয়োজন, আমার জীবনের জন্য, অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজন।

বিশ্ব হচ্ছে আত্মার প্রকাশ, এবং আত্মার মতো সৃষ্টি ও অমর। সৃষ্টি কোথাও থেমে যেতে পারে না। বৈষ্ণবী নিত্যলীলার ধারণার সঙ্গে এ ধারণার মিল আছে। সৃষ্টি পাপজাত নয়, শঙ্করবাদীর মতানুযায়ী অবিদ্যার ফল নয়। সৃষ্টি হচ্ছে অমর শক্তির অমর লীলা, দৈবলীলা বলতে চান বলুন।

প্রশ্ন করতে পারেন যে আমি অভিজ্ঞতাকে যেমনটি পাচ্ছি তেমনটি মেনে না নিয়ে আবার বাস্তবের মূল প্রকৃতি বা এজাতীয় সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি কেন? এর উত্তর অত্যন্ত সহজ। যে মুহূর্তে আমরা অভিজ্ঞতাকে বিশ্লেষণ করি, সে মুহুর্তে আমাদের আমি—যার মন গ্রহণ করছে, আর আমি-বহির্ভূত যা কিছু, আমাদের ধারণা জন্মাচ্ছে, অভিজ্ঞতার ভূমি রচনা করছে তাকে— ধরে নিতে হয়। আমি-বহির্ভূত অস্তিত্বকে মেনে নিতেই হবে, চোখ বুজে থাকলেই তাকে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। এই অস্তিত্ব, এই বাস্তব আমাদের সমগ্র অভিজ্ঞতার পশ্চাতে রয়েছে, তার সম্বন্ধে আমাদের ধারণাতেই আমাদের ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক মুল্য বোধ নিরুপিত হয়।

না, অস্তিত্বকে অবহেলা করা চলে না। তার প্রকৃতিকে জানবার চেষ্টা আমাদের করতেই হবে, যদিও পর্বেই বলেছি যে সেই জানাকে পরম জ্ঞান আখ্যা দিলে চলবে না। এই আপেক্ষিক সত্যই আমাদের জীবনের ভিত্তি তা যত পরিবর্তনশীল হোক না কেন।

তবে বাস্তবকে পূর্ণ করে রয়েছে এই যে চেতনা, এর প্রকৃতি কি?

১৫৪