পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পথপরিবর্তনে এইসব গ্রামের স্বাস্থ্যসম্পদ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে অনেকেই এই অঞ্চল ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। এদের মধ্যে পুরন্দর খাঁর বংশধরও কয়েকজন ছিলেন। তাঁরা কোদালিয়া নামে পাশেই একটি গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন।

কিছুদিন নির্জীব থাকার পর কোদালিয়া, চিংড়িপোতা, হরিনাভি, মালঞ্চ, রাজপুর ইত্যাদি গ্রামগ‍ুলি আবার কর্মকোলাহলমুখর হয়ে ওঠে। উনিশ শতকের প্রথম ভাগে এই অঞ্চল শিল্প ও সংস্কৃতিতে আশ্চর্য উন্নতি লাভ করেছিল—যে উন্নতি বিংশ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত অক্ষুন্ন ছিল। কিন্তু তার পরেই ম্যালেরিয়া মহামারীতে দেশ একেবারে উজাড় হয়ে যায়। আজ এইসব অঞ্চলে গেলে দেখতে পাওয়া যাবে জনমানবশূন্য গ্রামগলির জায়গায় আগাছায় ঢাকা বিরাট বিরাট দালানের ভগ্নাবশেষ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।

এইসব ভগ্নাবশেষ থেকেই ধারণা করা যায় কিছুদিন আগে এখানকার অবস্থা কতখানি উন্নত ও সমদ্ধিশালী ছিল। একশো বছর আগে এখানে যেসব পণ্ডিত জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাঁরা ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যের ধারাকেই বহন করে এনেছিলেন, কিন্তু তাই বলে তাঁরা মোটেই প্রগতিবিরোধী ছিলেন না। এদের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের প্রচারক—যে ব্রাহ্মসমাজকে তখনকার সমাজ ও সংস্কৃতির দিক থেকে বিচার করলে দস্তুরমতো বৈপ্লবিক বলা চলত। আর কয়েকঞ্জন ছিলেন পত্রিকা সম্পাদক। বাঙলা সাহিত্যে তাঁদের দান অপরিমেয়। পণ্ডিত আনন্দচন্দ্র বেদান্তবাগীশ ছিলেন তখনকার দিনের বিশেষ প্রতিপত্তিশালী পত্রিকা “তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা”র সম্পাদক এবং ব্রাহ্মসমাজের একজন প্রচারক। পণ্ডিত দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ ছিলেন প্রথম বাঙলা সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সোমপ্রকাশে’র