পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রভাব খর্ব করে হিন্দুধর্মের প্রচার করা। এ ব্যাপারে অবশ্য ব্রাহ্মদের সঙ্গে গোঁড়া পণ্ডিতদের মতৈক্য ছিল, কিন্তু অন্য সব ব্যাপারে তাঁদের মধ্যে কখনো মতের মিল দেখা যায়নি। পুরাতনপন্থীদের সঙ্গে নতুনের, পণ্ডিতদের সঙ্গে ব্রাহ্মদের এই সংঘর্যের ফলে আর একটি নতুন মতের উদ্ভব হয়েছিল। এই নতুন মতের প্রধান সমর্থক হলেন পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এই মতের সমর্থকেরা প্রগতিপন্থী ছিলেন, এবং তাঁরা দেশীয় ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির সমন্বয়ের সমর্থন করতেন। কিন্তু পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ধারাকে মোটামুটি সমর্থন করলেও এঁরা কখনো হিন্দুসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে রাজি হননি এবং প্রথম যুগের ব্রাহ্মদের মতো পাশ্চাত্য রীতিনীতির অন্ধ অনুকরণকেও সমর্থন করেননি। গোঁড়া পণ্ডিতর‍ূপে শিক্ষিত হলেও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির একজন প্রধান সমর্থক ছিলেন। তাঁর মহানুভবতা এবং সমাজসংস্কারের প্রচেষ্টা তো সর্বজনবিদিত। এ ছাড়া আধুনিক বাঙলা গদ্যের জনক হিসেবেও বাঙলা সাহিত্যে তাঁর স্থান সুপ্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এত প্রগতিপন্থী হলেও বিদ্যাসাগর ব্যক্তিগত জীবনে চিরকাল অত্যন্ত নিষ্ঠাবান পণ্ডিতের মতো অনাড়ম্বর জীবনযাপন করেছেন। বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে তুমুল আন্দোলন করে তিনি রক্ষণশীল সম্প্রদায়ের বিরাগভাজন হয়েছিলেন— কিন্তু তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে বিধবা বিবাহ সম্পূর্ণ শাস্ত্রসম্মত। ঈশ্বরচন্দ্র যে মানসিক উদারতা ও মানবহিতৈষণার প্রতিভূস্বর‍ূপ ছিলেন ধর্মে ও দর্শনে তার প্রকাশ পেয়েছিল রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব (১৮৩৪-৯৮৮৬) ও তাঁর যোগ্য শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দের (১৮৬০-১৯০২ মধ্যে। ১৯০২ সালে স্বামী বিবেকানন্দ মারা গেলে এই আধ্যাত্মিক আন্দোলনের ধারা বহন করবার ভাৱ পড়ল অরবিন্দ ঘোযের উপর।

১৮