পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দেখিয়েছিল তারই প্রতিদানে বৃটিশ সরকার এদের জমিদার পদমর্যাদা দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল।

বিদেশী শাসকের গড়া এই নব্য অভিজাত সম্প্রদায় যে তখনকার সমাজে শীর্ষস্থান অধিকার করেছিল সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। মহারাজা যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর, রাজা বিনয়কৃষ্ণ দেববাহাদুর প্রমুখ লোকদের সরকারপক্ষ সমাজের নেতা বলে গ্রহণও করেছিল। কিন্তু সাধারণ লোকের উপর এদের নৈতিক বা সাংস্কৃতিক কোনো প্রভাবই ছিল না। আমার পিতার যৌবনকালে এই প্রভাব বিস্তার করেছিলেন কেশবচন্দ্র সেন এবং কিছু পরিমাণে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। কেশবচন্দ্রের শিষ্য ছিল অগণন, তিনি যেখানেই যেতেন বিরাট জনতা তাঁকে ঘিরে থাকত। তাঁর বক্ত‌ৃতার আধ্যাত্মিক ভাবধারা সমাজের উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। বিশেষত যুবসম্প্রদায়ের উপর তার প্রভাব ছিল অপরিমেয়। অন্যান্য ছাত্রদের মতো আমার পিতাও কেশবচন্দ্রের অসাধারণ ব্যক্তিত্বে প্রভাবান্বিত। হয়েছিলেন, এমন কি এক সময়ে তিনি ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেবার উদ্যোগও করেছিলেন। যাই হোক, আমার পিতার জীবনে কেশবচন্দ্রের প্রভাব যে খুব বেশি ছিল সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এর বহুদিন পরে কটকপ্রবাসের সময়ে এই মহাপুরুষের অনেক ছবি আমাদের বাড়ির দেয়ালে টাঙ্গানো দেখেছি। স্থানীয় ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গেও আমার পিতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।

আমার পিতার প্রথম বয়সে দেশে এক ধরনের নৈতিক জাগরণ দেখা গিয়েছিল সত্যি, কিন্ত‌ু রাজনীতির দিক থেকে তখন পর্যন্ত দেশের লোকের মধ্যে কোনো সাড়াই জাগেনি। কেশবচন্দ্র ও ঈশ্বরচন্দ্র—সমাজসংস্কারক হিসেবে দুজনেই বিশেষ প্রভাবশালী ছিলেন, কিন্তু এঁরা

২০