পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ক্যাডোগানকে আমরা কোনোরকমে বরদাস্ত করতাম। আর, মিস্ স্যামুয়েলকে তো আমরা দস্তুরমতো ঘৃণা করতাম—কোনোদিন যদি তিনি অনুপস্থিত থাকতেন আমাদেৱ মধ্যে হুল্লোড় পড়ে যেত। মিসেস্ ইয়াংকে অবশ্য আমরা অপছন্দ করতাম না। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে ভালো লাগত মিস্ সারা লরেন্স-কে, তিনি ছিলেন আমাদের প্রথম শিক্ষয়িত্রী। এমন আশ্চর্য সহানুভূতিশীল ছিল তাঁর মন এবং শিশ‍ুমন তিনি এমন অন্তৱঙ্গভাবে বুঝতেন যে আমরা সকলেই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে পারিনি। গোড়ার দিকে যখন আমি এক বর্ণও ইংরিজি বলতে পারতাম না তখন তাঁর সাহায্য না পেলে আমি অত সহজে ক্লাসের সঙ্গে তাল রেখে চলতে পারতাম কি না সন্দেহ।

অধিকাংশ শিক্ষকশিক্ষয়িত্রী এবং ছাত্রছাত্রী অ্যাংলো-ইণ্ডিয়ান হলেও আমাদের স্কুলটা ছিল বিলিতী ছাঁচে গড়া এবং যতদূর সম্ভব বিলিতী-ভাবাপন্ন। এর ফলে এমন কয়েকটা জিনিস আমরা শিখেছিলাম যা সাধারণ দেশী স্কুলে পড়লে শিখতে পারতাম না। দেশী স্কুলে যেমনটি দেখা যায়, ছাত্রছাত্রীদের ষোলোআলা মনোযোগই বরাদ্দ হয় পড়ার উপরে, এখানে মোটেই তা ছিল না। পড়ার চাইতে বেশি মনোেযোগ দেওয়া হত ভদ্র আচরণ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও সময়ানুবর্তিতার উপরে—দেশী স্কুলে যার একান্ত অভাব। পড়াশোনার ব্যাপারেও প্রত্যেকটি ছাত্রছাত্রী সম্পর্কে ব্যক্তিগত মনোযোগ দেওয়া হত, রোজকার পড়া নিয়মিতভাবে শেখানো হত—দেশী স্কুলে যেটা খুব কমই হয়। রোজকার পড়া এইভাবে হয়ে যাওয়ার ফলে পরীক্ষার আগে রাত জেগে পড়বার কোনো দরকারই হত না। তাছাড়া এখানে দেশী স্কুলের চাইতে অনেক ভালো ইংরিজি শেখানো হত।

কিন্তু এত সব সুবিধে সত্ত্বেও ভারতীয় ছেলেদের পক্ষে এরকম স্কুলে

২৫