পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অনুভব করেছি এবং এই পরিবেশ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন বোধ করেছি। স্বদেশী আদর্শে গড়া কোনো স্কুলে পড়বার জন্য তখন থেকেই আমার মনে আগ্রহ জেগে উঠেছিল। ভাবতাম ভারতীয় পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারব। কিন্তু ১৯০৯ সালে জানুয়ারি মাসে স্কুল ছাড়বার সময়ে যখন আমি ছাত্র ও শিক্ষকশিক্ষয়িত্রীদের কাছ থেকে বিদায় নেবার পর প্রধান শিক্ষকমশাইয়ের কাছে বিদায় নিতে গেলাম তখন আমার মনে বিন্দুমাত্র বির‍ুদ্ধভাবও ছিল না। তখনকার মনোভাব বিশ্লেষণ কররার ক্ষমতা সে সময়ে আমার ছিল না। আজ অভিজ্ঞ মন নিয়ে বিচার করে এই মনোভাবের অনেকগুলি কারণ আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

পড়াশোনায় আমি বরাবরই ভালো ফল করে এসেছি, কিন্তু খেলাধুলায় নেহাতই আনাড়ী ছিলাম। অথচ আমাদের স্কুলে পড়াশোনার চাইতে খেলার উপরেই বেশি জোর দেওয়া হত, তাই নিজের সম্বন্ধে আমার বরাবরই খুব নিচু ধারণা ছিল। এই ধারণা বহু চেষ্টা করেও মন থেকে সরাতে পারিনি। একেবারে নিচু ক্লাসে ভরতি হয়েছিলাম বলেই বোধ হয় বড়দের তুলনায় নিজেকে তুচ্ছ মনে করা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।

সব দিক বিচার করে আজকের দিনে এই ধরনের স্কুলে ভারতীয় ছেলেমেয়েদের শিক্ষালাভের আমি পক্ষপাতী নই। বিদেশী আবহাওয়ার সঙ্গে তারা কখনোই খাপ খাবে না, পদে পদে অশান্তি ভোগ করবে; বিশেষ করে যদি কেউ একটু চিন্তাশীল হয় তবে তো কথাই নেই। অনেক অভিজাত পরিবারে ছেলেদের বিলেতে পাব‍্লিক স্কুলে রেখে শিক্ষা দেবার রীতি আজও চলে আসছে। এ ব্যবস্থাও আমার মোটেই ভালো মনে হয় না। একই কারণে বিলিতী ছাঁচে গড়া

৩১