পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হলাম গিয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে— কাজেই বড় ছেলেদের হিংসে করবার আর কোনো কারণ রইল না। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্ররা নিজেদের উঁচু ক্লাসের ছাত্র বলেই মনে করত এবং বেশ একটা ভারিক্কী চালে চলাফেরা করত। আমিও তাদের দলেই ছিলাম। কিন্তু একটা ব্যাপার আমাকে একেবারে কাবু করে রেখেছিল। এই স্কুলে ভরতি হবার আগে আমি বাঙলা এক বর্ণও পড়িনি। এদিকে আমার সহপাঠীরা সকলেই বাঙলায় বেশ পাকা ছিল। মনে পড়ে প্রথম দিন আমি ‘গর‍ু’ (না ঘোড়া?) সম্বন্ধে বাঙলায় একটি প্রবন্ধ লিখেছিলাম, আর সেই রচনা নিয়ে ক্লাসে সে কি হাসাহাসি! ব্যাকরণ বা বানান সব কিছুতেই আমি দিগ‍্গজ ছিলাম। শিক্ষকমশাই যখন টীকাটিপ্পনি সহকারে ক্লাসের সকলকে আমার অপূর্ব রচনাখানি পড়ে শোনালেন তখন চারদিকে এমন হাসির ধুম পড়ে গেল যে লজ্জায় জামি প্রায় মাটিতে মিশে গেলাম। পড়াশোনার জন্য এভাবে আগে কখনো আমাকে বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়নি, তার উপরে আমার আত্মসম্মানজ্ঞানও হালে একটু বেড়েছিল, কাজেই আমার অবস্থাটা কী দাঁড়িয়েছিল সহজেই বুঝতে পারবেন। এর পর বহুদিন পর্যন্ত বাঙলা ক্লাসের নামেই আমার জ্বর আসত। কিন্তু ভেতরে ভেতরে রাগে দুঃখে জ্বলে গেলেও প্রথম প্রথম টিট‍্কিরি সহ্য না করে উপায় ছিল না। মনে মনে তখন থেকেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম বাঙলা আমি শিখবই। ধীরে ধীরে বাঙলায় বেশ উন্নতি করতে লাগলাম এবং বাৎসরিক পরীক্ষায় যখন বাঙলায় আমিই সবচেয়ে বেশি নম্বর পেলাম তখন আমার আনন্দ দেখে কে?

এই নতুন পরিবেশে আমার দিন খুব আনন্দেই কাটছিল। আগের স্কুলে সাত বছর কাটালেও সেখানে আমার বন্ধু বলতে কেউ ছিল না। কিন্তু এখানে এসে অনেক অন্তরঙ্গ বন্ধু জুটে গেল। আমার বন্ধুরাও

৩৪