পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এর দুটো দিক ছিল—প্রথমত, জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করার স্বাভাবিক ইচ্ছার সঙ্গে নবজাগ্রত আধ্যাত্মিক চেতনার সংঘাত। দ্বিতীয়ত, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে যে যৌনচেতনা, আমার মধ্যে দেখা দিয়েছিল তাকে অস্বাভাবিক এবং দুর্নীতিমুলক ভেবে ক্রমাগত দমন করবার চেষ্টা।

যে প্রকৃতিপ‍ূজার কথা আগে বলেছি, তাতে মনের শান্তি যে খানিকটা ফিরে পাইনি, তা নয়, কিন্তু সে আর কতটুকু! এমন একটা আদর্শের তখন আমার প্রয়োজন ছিল, যার উপরে ভিত্তি করে আমার সমস্ত জীবনটাকে গড়ে তুলতে পারব—সবরকম প্রলোভন তার কাছে তুচ্ছ হয়ে যাবে। এমন একটি আদর্শ খুঁজে বের করা সহজ ছিল না। মানসিক অশান্তি আমাকে ভোগ করতে হত না, যদি আমি আর দশজনের মতো জীবনের দাবিকে সহজভাবেই মেনে নিতাম কিংবা দৃঢ়ভাবে জীবনের সমস্ত প্রলোভনকে তুচ্ছ করে যে কোনো একটা আদর্শকে আঁকড়ে ধরতাম। কিন্ত‌ু কোনোটাই আমি পারিনি। জীবনের সাধারণ প্রলোভনে ধরা দিতে আমি রাজী ছিলাম না, কাজেই সংঘর্ষ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু মনের দিক থেকে আমি ছিলাম অত্যন্ত দুর্বল, তাই এই সংঘর্ষ আমার পক্ষে অত্যন্ত প্রাণান্তকর হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জীবনে একটা সঠিক আদর্শ খুঁজে না পাওয়ার জন্যই যে এ অবস্থা হয়েছিল তা নয়, কারণ আদর্শ আমি খুঁজে পেয়েছিলাম, কিন্তু সেই আদর্শকে একাগ্রভাবে জীবনে অনুসরণ করা আমার পক্ষে মোটেই সহজ হয়নি। আমার ভিতরকার বির‍ুদ্ধ ও বিদ্রোহী ভাবগুলোকে দমন করে মনে শান্তি ও শৃঙ্খলা আনতে দীর্ঘকাল সময় লেগেছিল, কারণ আমার শরীর মন দুইই ছিল দুর্বল।

হঠাৎ সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবেই যেন সমস্যার সমাধান খুঁজে পেলাম।

৪২