পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এরকম গ‍ুর‍ু তখনো আমার জোটেনি, কাজেই বই পড়ে যতটুকু শেখা যায় তাই দিয়েই কাজ চালাতাম। পরে অবশ্য বুঝতে পেরেছিলাম যে এজাতীয় বই অধিকাংশই বাজে লোকের লেখা, যাদের উপর কোনোমতেই নির্ভর করা চলে না। ব্রহ্মচর্য, যোগ, হঠযোগ ইত্যাদি সম্বন্ধে এই ধরনের অনেক বই বাজারে পাওয়া যেত। আমরা সাগ্রহে এইসব কিনে পড়তাম, এবং এগ‍ুলিতে যেসব নিয়মকানুন দেওয়া থাকত সেগুলি বিনাদ্বিধায় পালন করতাম। এ ছাড়া আরো কত রকমের বিচিত্র সব অনুষ্ঠান যে পালন করা হত তার একটা বিবরণ দিলে প্রচুর হাসির খোরক মিলবে। সে সময়ে আমাকে অনেকে কেন পাগল ভাবত, এখন সেটা বুঝতে পারি।

প্রথম যখন যোগ অভ্যাস করব বলে ঠিক করলাম তখন একটা সমস্যা দেখা দিল—ভেবেই পাচ্ছিলাম না লোকচক্ষু এড়িয়ে কী ভাবে কাজটা করা যায় এবং দুর্ভাগ্যক্রমে যদি কেউ আমাকে দেখে ফেলে তবে কী করে ঠাট্টাতামাশার হাত থেকে বাঁচা যাবে। ঠিক করলাম সন্ধ্যার পর বসা যাবে তাহলে অন্ধকারে সহজে আমাকে কেউ দেখতে পাবে না। কয়েকদিন বেশ নির্বিঘ্নেই কাটল, কিন্তু হঠাৎ একদিন ধরা পড়ে গেলাম। সে এক ভারি মজার ব্যাপার। অন্ধকার ঘরে বসে যোগ অভ্যাস করছি, এমন সময়ে ঝি বিছানা করবার জন্যে সেই ঘরে ঢুকে অন্ধকারে হুড়মড় করে একেবারে আমার ঘাড়ে এসে পড়ল। আলো জালাবার পর আমাকে ওভাবে দেখে বেচারা কি রকম হতভম্ব হয়েছিল, বুঝতেই পারেন।

যোগ অভ্যাসের নানারকম প্রক্রিয়া ছিল। সাধারণত যেটা অনসরণ করা হত সেটা এই—শাদা খানিকটা জায়গার ঠিক মাঝখানে একটা কালো বৃত্ত এঁকে সেই বৃত্তের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে হবে যতক্ষণ

৪৮