পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তখনো আমার ষোল পূর্ণ হয়নি, সেই প্রথম পল্লীসংস্কারের অভিজ্ঞতা হল। কটকের প্রান্তে একটি গ্রামে দলবেঁধে এগিয়ে আমরা পল্লী সংস্কারের কাজ শ‍ুর‍ু করলাম। গ্রামের একটি স্কুলে ঢুকে কিছুটা শিক্ষকতা করা গেল। স্কুলের শিক্ষকেরা এবং গ্রামের লোকেরাও আমাদের সাদর অভিনন্দন জানাল। আমরা খুব উৎসাহ পেলাম। এর পর আর একটি গ্রামে গেলাম, কিন্তু আমাদের স্রেফ বোকা বনে যেতে হল। আমাদের গ্রামে ঢুকতে দেখেই গ্রামের লোকেরা দলবেঁধে আমাদের কাছ থেকে সরে পড়তে লাগল। তাদের সঙ্গে বন্ধুভাবে একটা কথা বলা দূরে থাক, তাদের নাগাল পাওয়াই দুষ্কর হয়ে উঠল। যখন দেখলাম তারা আমাদের শ‍ুধু যে স্বজন বলে মানতে রাজী নয় তা নয়, আমাদের তারা দস্ত‌ুরমতো শত্র‌ুপক্ষ বলেই মনে করে, তখন আমাদের হতাশার সীমা রইল না। তবে তাদের ব্যবহারে একটা কথা পরিষ্কার বুঝতে পারলাম—আমাদের আগে তথাকথিত যত ভদ্রলোেকই এখানে এসে গেছেন তাঁরা হয় ট্যাক্স-কালেক্টর বা ঐ জাতীয় কোনো পেশা নিয়ে এসেছেন এবং গ্রামের লোকদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করেছেন যার ফলে আজ আমাদের ও গ্রামবাসীদের মধ্যে এই দ‍ুস্তর ব্যবধান দেখা দিয়েছে। কয়েক বছর পরে উড়িষ্যার আরো কয়েকটা গ্রামেও আমার একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

যতদিন স্কুলে ছিলাম অন্যান্য ব্যাপারে অকালপক্ক হলেও রাজনৈতিক জ্ঞান আমার সামান্যই ছিল। এর একটা বড় কারণ রাজনীতির দিকে আমার তেমন ঝোঁক ছিল না, বাড়িতেও রাজনীতির চর্চা বিশেষ হত না। তাছাড়া গোটা উড়িষ্যাটাই রাজনীতির দিক থেকে অত্যন্ত পেছিয়ে ছিল। দাদাদের মুখে কংগ্রেসের কার্যকলাপ সম্মন্ধে মাঝে,

৫৩