পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হয়ে যেত। রাত্তিরে জমাট একটি ভূতের গল্প শুনে জ্যোৎস্নারাত্রের আলো-আঁধারে গাছের উপর ভূতের দেখা পাওয়া মোটেই আশ্চর্য ছিল না। আমাদের মুসলমান বাবুর্চি তো একদিন রাত্রে বলে বসল তাকে ভূতে পেয়েছে। কী করা যায়! শেষটায় ওঝা ডেকে সেই ভূত তাড়ানো হল। এই ধরনের ব্যাপার আরো কয়েকটা ঘটেছিল। আমাদের একজন মুসলমান কোচোয়ান নিজেকে একজন ওস্তাদ ভুতের ওঝা বলে জাহির করত। সে নাকি কব্জির কাছটায় চিরে ভূতকে সেই রক্ত খাইয়ে বিদায় করত। তার কথা কতখানি সত্যি বুঝতাম না, তবে একথা ঠিক যে তার কব্জির কাছে পুরনো ক্ষতচিহ্ন তো ছিলই, নতুন ক্ষতও প্রায়ই দেখতে পেতাম। সে একটু আধটু হাকিমিও জানতে এবং অজীর্ণ, পেটের অসুখ ইত্যাদি রোগের নানারকম ওষুধ তৈরি করত। ছেলেবেলার এইসব অভিজ্ঞতা সহজে মন থেকে লপ্ত হয়নি। বড় হয়ে প্রাণপণ চেষ্টায় আমি এদের প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করেছি।

মনকে এইসব কুসংস্কার থেকে মুক্ত করতে বিবেকানন্দই আমাকে সাহায্য করলেন। তিনি যে ধর্মপ্রচার করতেন, যে যোগসাধনায় বিশ্বাস করতেন—সবেরই মূলভিত্তি ছিল বেদান্ত এবং বেদান্তকে তিনি গ্রহণ করেছিলেন সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে। তাঁর জীবনের একটা বড় আদর্শ ছিল ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের সময় ঘটানো। তার মতে এই সময় বেদান্তের মধ্য দিয়েই সম্ভব। শিশ‍ুশিক্ষা নিয়ে যাঁরা এদেশে গবেষণা করেন একটা জিনিস তাঁদের লক্ষ্য করা একান্ত দরকার; আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের মন অনেক প্রতিকূল প্রভাবের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে—যেমন ধরুন, শিশুকে ঘুম পড়াবার জন্য মা, মাসী পিসী বা কি—এরা যে সমস্ত ঘুমপাড়ানি,

৫৭