পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গান গেয়ে থাকে, শিশ‍ু খেতে না চাইলে তাকে জোর করে খাওয়াবার জন্য যেসব কথা বলে তাকে ভোলান হয়—প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায় এসবের একমাত্র উদ্দেশ্য শিশুকে ভয় দেখিয়ে কাজ হাসিল করা। বাঙলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘুমপাড়ানি গান হল—‘ঘুমপাড়ানি মাসীপিসী, বর্গী এলে দেশে...।’ বর্গীদস্যুদের নৈশ অভিযানের কাহিনী শিশ‍ুদের মনে আতঙ্কেরই সৃষ্টি করে এবং তার ফল যে ভালো হতে পারে না সে কথা বলাই বাহুল্য।

শিশ‍ুরা সাধারণত যেসব স্বপ্ন দেখে তাদের জাগ্রত জীবনেও তার প্রভাব খানিকটা থেকে যায়। মনস্তত্ত্ব ও স্বপ্নতত্ত্ব সম্বন্ধে জ্ঞান থাকলে অভিভাবক বা শিক্ষকের পক্ষে শিশ‍ুমন বোঝা অনেকটা সহজ হয়ে পড়ে এবং তখন সবরকম অবাঞ্ছিত প্রভাব থেকে শিশুদের রক্ষা করা সম্ভব হয়। ছেলেবেলায় আমি প্রায়ই সাপ, বাঘ, বাঁদর ইত্যাদি সম্বন্ধে অত্যন্ত ভয়াবহ সব স্বপ্ন দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে থাকতাম—এজন্যই এসব কথা তুললাম। বড় হয়েও যৌনবিষয়ক স্বপ্ন, য়ুনিভার্সিটির পরীক্ষার স্বপ্ন, গ্রেপ্তার এবং কারবালের স্বপ্ন—ইত্যাদি নানারকম দুঃস্বপ্ন প্রায়ই আমাকে কষ্ট দিত। পরে যখন যোগ অভ্যাস করি সে সময়ে বিশেষ একটি প্রক্রিয়ার সাহায্যে এই ধরনের দুঃস্বপ্নের হাত থেকে চিরকালের জন্য রেহাই পেয়েছিলাম।

একটা জিনিস একমাত্র ভারতবর্ষেই এবং বিশেষ করে রক্ষণশীল গোঁড়া পরিবারেই দেখা যায়। এদেশে ছেলেদের বয়স বাড়ে, তারা য়ুনিভার্সিটির ডিগ্রীও পায়, কিন্তু তাদের নাবালকত্ব আর ঘুচতে চায় না, মনের কোনো প্রসারই তাদের হয় না। অবিশ্যি সময়ে সময়ে যে অনেকে পরিবার ও সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে না, তা নয়। এদিক থেকে আমার ভাগ্যটা ছিল ভালো। আমাদের পরিবারে কোনো

৫৮