পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রকমের সংকীর্ণতা বা গোঁড়ামি ছিল না—ফলে আমার মন স্বভাবতই উদার হয়ে গড়ে উঠেছিল। ছেলেবেলায় প্রথমেই ইংরিজি শিক্ষা ও সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসেছিলাম, ইংরেজদের সঙ্গে মিশেছিলাম। এরপর আমার নিজের দেশের সংস্কৃতির সঙ্গেও পরিচিত হলাম। যখন স্কুলে পড়ি তখন থেকেই বিভিন্ন প্রদেশের ছেলেদের সঙ্গে আমার আলাপ পরিচয় হয়েছিল—বাঙলাদেশে থাকলে যেটা হত কি না সন্দেহ। মুসলমানদের সম্বন্ধে আমার উদার মনোভাবের জন্যও ছেলেবেলার অভিজ্ঞতাই বহুল পরিমাণে দায়ী। আমাদের বাড়ি ছিল মুসলমান এলাকায়। প্রতিবেশীরাও প্রায় সকলেই ছিল মুসলমান। বাবাকে এরা সকলেই খুব শ্রদ্ধা করত। আমরাও মুসলমানদের মহরম ইত্যাদি উৎসব অনুষ্ঠানে যোগ দিতাম। আমাদের চাকদের মধ্যেও কয়েকজন ছিল মুসলমান, আর সকলের মতো তারাও আমাদের খুব অনুরক্ত ছিল। স্কুলে মুসলমান শিক্ষক এবং সহপাঠীদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। সত্যি বলতে কি মস‍্জিদে গিয়ে উপাসনা করা ছাড়া আর কোনো ব্যাপারেই আমি আমাদের সঙ্গে মুসলমানদের কোনো প্রভেদ দেখতাম না। তাছাড়া তখনকার দিনে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে রেষারেষি বা ঝগড়াঝাঁটি মোটেই হিল না। যে পরিবেশে আমি মানুষ হয়েছিলাম সেটা মোটামুটি উদারভাবাপন্ন হলেও অনেক ক্ষেত্রে সমাজ ও পরিবারের বিরুদ্ধে আমাকে বিদ্রোহ করতে হয়েছে। আমার বয়স যখন চোদ্দ কি পনেরো সে সময়কার একটি ঘটনার কথা বলি। প্রতিবেশী আমার এক সহপাঠী (দেবেন দাস) একদিন আমাদের কয়েকজনকে তার বাড়িতে খেতে বলে। মায়ের কানে কথাটা যেতেই তিনি স্রেফ আমাদের যেতে বারণ করে বসলেন। হয়তো বন্ধটি আভিজাত্যে আমাদের চাইতে ছোটো ছিল

৫৯