পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আসিনি থাকতে এসেছি, কাজেই কলকাতার আসল রূপটির সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ পেলাম। তখন কে জানত এই পরিচয়ের জের আমার সারা জীবন ধরেই চলবে।

অন্য যে কোনো বড় শহরের মতো কলকাতার জীবনও সকলের ঠিক সহ্য হয় না—অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে প্রতিভাবান ছেলেরা কলকাতায় এসে একেবারে বিগড়ে গেছে। আমি যদি আগে থেকেই বিশেষ একটা আদর্শ না নিয়ে কলকাতায় আসতাম তবে আমার অবস্থাও হয়তো তাই দাঁড়াত। স্কুল ছাড়বার পর থেকেই আমার মনে বড় রকমের একটা ওলটপালট চলছিল সত্যি, কিন্তু তার মধ্যেই আমার কর্তব্য আমি স্থির করে ফেলেছিলাম—ঠিক করেছিলাম বাধাবিপত্তি যাই আসুক না কেন গড্ডলিকাপ্রবাহে কখনো গা ভাসাবো না। জনসেবা ও আধ্যাত্মিক উন্নতিই হবে আমার জীবনের লক্ষ্য। জীবনের মূল সমস্যাগুলি যাতে সমাধান করতে পারি তার জন্য দর্শনশাস্ত্র বেশ ভালো করে পড়ব বলে স্থির করলাম। দৈনন্দিন জীবনে রামকৃষ্ণ এবং বিবেকানন্দ ছিলেন আমার আদর্শ। আমি যে অর্থোপার্জনের দিকে কখনো যাবো না সে সম্বন্ধে প্রায় নিশ্চিত ছিলাম। কলকাতায় আসবার সময়ে এই ছিল আমার দৃষ্টিভঙ্গী। এইসব সংকল্প কোনো ব্যক্তিবিশেষের উপদেশ বা এক রাত্রির চিন্তার ফল বলে মনে করলে ভুল করা হবে। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে নানা অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে এইসব সিন্ধান্তে পৌছেচি। এজন্য কত বই যে পড়েছি, কত গ‍ুর‍ুর পদতলে বসেছি তার ইয়ত্তা নেই। এত সাধনার পর জীবনের সঠিক আদর্শটি খুঁজে পেয়েছিলাম। এতখানি বেগ পেতে হত না যদি আরো বড় বাধা আমার পথরোধ না করত। একদিকে পারিবারিক অনুশাসন, আর একদিকে পার্থিব

৬৩