পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যোলো বছরের একটি ছেলে যদি একা কলকাতার মতো বড় শহরে আসে তবে প্রথম প্রথম সে দিশা হারিয়ে ফেলে। কিন্তু আমার বেলা তা ঘটেনি—কলেজ খোলবার আগেই আমি কলকাতায় বেশ গ‍ুছিয়ে বসলাম, পছন্দমতো অনেক বন্ধুও জুটিয়ে ফেললাম।

কলেজে প্রথম কয়েকদিন ভারি মজায় কেটেছিল। যে কোনো বৃটিশ য়ুনিভার্সিটির চাইতে এদেশের কোনো য়ুনিভার্সিটির প্রবেশিকা পরীক্ষা অনেক সহজ বলে এদেশের ম্যাট্রিকুলেটরা ইংরেজ ছেলেদের চেয়ে একটু অল্প বয়সেই কলেজে ভরতি হয়। আমি যখন প্রেসিডেন্সি কলেজে ভরতি হলাম তখন আমার বয়স ষোলোর সামান্য উপরে, তবু কলেজে ঢোকবার সময়ে মনে হল আমি যেন বড়দের পর্যায়ে পৌঁছে গেছি। অনুভূতিটা বেশ সুখকর সন্দেহ নেই। প্রথম কয়েকটা দিন নতুন বন্ধুত্ব পাতাতেই কেটে গেল। প্রবেশিকা পরীক্ষায় যারা উঁচু স্থান অধিকার করেছিল তাদের দেখবার জন্য সকলেই ব্যঘ্র হয়ে হিল। মফঃস্বল থেকে আসার দর‍ুন আমি গোড়ার দিকে একটু লাজুক ও মুখচোৱা গোছের ছিলাম। কলকাতার হিন্দু এবং হেয়ার স্কুল জাতীয় আরো স্কুল থেকে কয়েকটি অত্যন্ত চালিয়াত এবং সবজান্তা ছেলে এসে আমাদের সঙ্গে ভরতি হয়েছিল। কিন্তু তাদের চালিয়াতি বেশিদিন টেকেনি, কারণ প্রবেশিকা পরীক্ষায় উঁচু স্থানগুলি বেশির ভাগই অধিকার করেছিল মফঃস্বলের ছাত্ররা, তাছাড়া আরও কিছুদিনের মধ্যেই শহুরে ছেলেদের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিতে শুরু করেছিলাম।

অল্পদিনের মধ্যেই আমি সহপাঠীদের মধ্য থেকে আমার মতোই একদল ছেলে জূটিয়ে ফেললাম। আমাদের এই দলের সকলেই বাইরে বেশ একটু গোঁড়াভাব নিয়ে চলাফেরা করতাম বলে সহজেই লোকের

৭০