পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিল, তবে আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য একা জনসেবার উপরেই বেশি জোর দিত। জনসেবা বলতে এদের বিবেকানন্দের শিষ্যদের মতো হাসপাতাল বা দাতব্য চিকিৎসালয় ইত্যাদি স্থাপন করার উপরে বিশেষ আস্থা ছিল না—এদের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার প্রসারের মধ্য দিয়ে দেশের উন্নতি করা। এ ব্যাপারে এদের উপর খৃস্টান মিশনারিদের প্রভাব পড়া বিচিত্র নয়। বিবেকানন্দের শিষ্যরা অর্থাৎ রামকৃষ্ণ মিশনের কর্মীরা বিবেকানন্দের আদর্শ পুরোপুরি অনুসরণ করেননি। আমরা এই ত্র‌ুটি সংশোধন করতে এগিয়ে গেলাম। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হল ধর্ম এবং জাতীয়তার সমন্বয় ঘটানো—শ‍ুধু চিন্তায় নয়, কাজেও। তখনকার দিনে কলকাতার রাজনৈতিক আবহাওয়ায় জাতীয়তাবাদ প্রায় অপরিহার্য ছিল।

১৯১৩ সালে যখন আমি কটক ছেড়ে আসি তখন পর্যন্ত আমার মনে জীবনের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সুস্পষ্ট কোনো ধারণাই জন্মায়নি। শ‍ুধু জনসেবা সম্বন্ধে একটা অস্পষ্ট ধারণা আমার মনে ছিল, আর ছিল আধ্যাত্মিক জীবনের প্রতি একটা স্বাভাবিক আকর্ষণ। কলকাতায় এসে আমি ধীরে ধীরে সব বুঝতে শিখলাম। জানলাম জনসেবা যোগসাধনারই একটি অঙ্গ— এবং জনসেবার মধ্য দিয়েই দেশের উন্নতি সম্ভব। জনসেবা সম্বন্ধে আমাদের দলের ছেলেদের জ্ঞান এর বেশি তখনো অগ্রসর হয়নি—আমার মতোই তারা এ সম্বন্ধে আরো স্পষ্ট ধারণার জন্য অন্ধকার হাতড়ে বেড়াচ্ছিল। যাই হোক, আমাদের দলের একটা খুব বড় গুণ ছিল—দলের ছেলেরা সকলেই ছিল অত্যন্ত চটপটে এবং কর্মঠ এবং এদের মধ্যে অনেকে ভালো ছাত্র হিসেবেও খুব নাম করেছিল। এই দলের কার্যকলাপ তিনটি ধারায় বিভক্ত

৭২