পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ময্যে অরবিন্দ ঘোষই ছিলেন সবচেয়ে জনপ্রিয়—যদিও ১৯০৯ সাল থেকে তিনি স্বেচ্ছায় বাঙলাদেশ ছেড়ে বিদেশে নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন। তাঁর নাম তখন লোকের মুখে মুখে। রাজনীতির জন্য তিনি জীবনের সবরকম সুখস্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়েছিলেন। কংগ্রেসের অন্য সব নেতাদের দৃষ্টি যখন ঔপনিবেশিক স্বায়ত্ত শাসনের গণ্ডীতে আবদ্ধ, একমাত্র তিনিই তখন নির্ভয়ে পূর্ণস্বরাজের দাবি জানিয়েছিলেন এবং মুক্তকণ্ঠে বামপন্থী আদর্শ প্রচার করেছিলেন। হাসিমুখে তিনি কারাবাসও করেছিলেন। লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার ফলে সারা ভারতেই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। লোকমান্য তিলক ‘বড়দাদা’ নামে পরিচিত ছিলেন এবং অরবিন্দ ছিলেন ‘ছোটদাদা’। তিলক ছিলেন বামপন্থীদের নেতা। অরবিন্দর ছোটভাই বারীন্দ্রকুমার ঘোষ ছিলেন সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের অগ্রদূত। পুলিশ সন্দেহ করত বারীন্দ্রের সঙ্গে অরবিন্দের গোপন যোগাযোগ আছে—এ সম্পর্কে নানারকম জনশ্রুতিও ছিল। এর ফলে অরবিন্দের প্রতি দেশের যুবসম্প্রদায়ের শ্রদ্ধার সীমা ছিল না। তাছাড়া তাঁর মধ্যে রাজনীতি ও আধ্যাত্মিকতার যে সমন্বয় ঘটেছিল তার জন্য ধর্মভাবাপন্ন লোকেদের কাছেও তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯১৩ সালে আমি যখন কলকাতায় আসি তথনই দেশ অরবিন্দকে মহাপুরুষ বলে স্বীকার করে নিয়েছে। তাঁর সম্বন্ধে জনসাধারণের মনে যে উৎসাহ, যে প্রীতি দেখেছি সে রকম আর কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ে না। অরবিন্দ সম্বন্ধে সে সময়ে কত রকম জনশ্রুতি মে শোনা যেত তার ইয়ত্তা নেই, তার মধ্যে হয়তো কতক সত্যি, কতক মিথ্যা। একবার শুনলাম অরবিন্দ নাকি পেনসিল হাতে অর্ধ-সমাধিমগ্ন অবস্থায় নিজেরই সঙ্গে কথোপকথন লিপিবদ্ধ

৭৬