পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করতেন। বাঙলাদেশের বিশিষ্ট কয়েকজন লোকের কাছে তিনি চিঠিপত্রও লিখতেন। এইসব চিঠি লোকের হাতে হাতে ঘুরত। রাজনীতির সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার সমন্বয়ে যারা বিশ্বাস করতেন তাঁদের কাছে চিঠিগ‍ুলির বিশেষ মূল্য ছিল। আমাদের হাতেও মাঝে মাঝে এই চিঠি আসত। সকলকে সেইসব চিঠি পড়ে শোনান হত। একটি চিঠিতে অরবিন্দ লিখেছিলেন, “আমাদের প্রত্যেককে আধ্যাত্মিক বিদ্যুৎশক্তির এক একটি ডাইনামো হতে হবে, যাতে আমরা যখন উঠে দাঁড়াব তখন চারপাশে হাজার হাজার লোকের মধ্যে আলো ছড়িয়ে পড়ে— তারা স্বর্গীয় আনন্দ লাভ করে।” চিঠি পড়ে আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে শ‍ুর‍ু করেছিলাম দেশের সেবা করতে হলে আধ্যাত্মিক শক্তির একান্ত প্রয়োজন।

কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি অরবিন্দর চমকপ্রদ এইসব বাণী আমাকে ততটা আকৃষ্ট করেনি যতখানি করেছিল তাঁর জীবন-দর্শন। শস্করাচার্যের মায়াবাদের প্রভাব আমি কিছুতেই কাটিয়ে উঠতে পারছিলাম না, মনেপ্রাণে গ্রহণ করতেও বাধা ছিল। এই অবস্থা থেকে উদ্ধারের পথ খুঁজছিলাম। একের সঙ্গে বহ‍ুর, ব্রহ্মের সঙ্গে ব্রহ্মাণ্ডের একাত্মতার যে বাণী রামকৃষ্ণ এবং বিবেকানন্দ প্রচার করে গিয়েছিলেন তাতে আমার মন কিছুটা সংশয়মুক্ত হয়েছিল সত্যি, কিন্তু মায়াবাদের প্রভার পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এই সময়ে অরবিন্দ এলেন মুক্তির বার্তা নিয়ে। তিনি শ‍ুধু জড় ও চৈতন্য, ব্রহ্ম ও ব্রহ্মাণ্ডের একাত্মতা প্রমাণ করেই ক্ষান্ত হলেন না, বিভিন্ন যোগের একটি সময়ের সাহায্যে পরমজ্ঞান লাভের পথও নির্দেশ করলেন। হাজার হাজার বছর আগে ভগবদ্গীতা যোগসাধনার বিভিন্ন পথের সন্ধান দিয়েছিল। এই বিভিন্ন পথ হল-জ্ঞানের মধ্য দিয়ে

৭৮