পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কথা আজও বোধ হয় বাড়ির কেউ জানে না। বহুদিন পর্যন্ত এই লজ্জা আমি কাটিয়ে উঠতে পারিনি—যখনই চেনা কার‍ুর সঙ্গে দেখা হয়ে যাবার ভয় থাকতো ভিক্ষার ঝুলিটা কাঁধে ফেলে ডাইনে বাঁয়ে না তাকিয়ে সটান এগিয়ে যেতাম।

কলেজে আমি পড়াশোনায় ফাঁকি দিতে শুরু করলাম। অধ্যাপকদের কাউকেই আমার ভালো লাগত না, তাঁদের পড়ানোতে কোনো রস পেতাম না। ক্লাসে অধ্যাপকের পড়ানোয় মন না দিয়ে বসে বসে ভাবতাম—লেখাপড়া করে কী লাভ? সবচেয়ে বিরক্ত লাগত অঙ্কের অধ্যাপকের একঘেয়ে বক্ত‌ৃতা। তাঁর কোনো কথা আমার কানে যেত না, গেলেও তার মানে বুঝতাম না। কলেজ-জীবনের এই একঘেয়েমি কাটাবার জন্য আমি জনহিতকর নানা কাজে মেতে থাকতাম। খেলাধুলায় আমার উৎসাহ ছিল না, আগেই বলেছি। আমার দৃষ্টি ছিল অন্য দিকে। নিজের থেকেই আমি বিখ্যাত রসায়নবিদ্ অধ্যাপক স্যর পি. সি. রায়ের সঙ্গে আলাপ করেছিলাম। পি. সি. রায় অবিশ্যি আমাদের পড়াতেন না, কিন্তু তাঁর মহানুভবতার জন্য ছাত্র মহলে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা, বন্যা বা দুর্ভিক্ষপীড়িতদের জন্য টাকা তোলা, ছাত্রদের প্রতিনিধি হয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তা বলা, সহপাঠীদের নিয়ে বাইরে বেড়াতে যাওয়া—এই ধরনের কাজ আমার খুব ভালো লাগত। এর ফলে কিছুদিনের মধ্যেই আত্মকেন্দ্রিকতা কাটিয়ে উঠে আমি বেশ সামাজিক হয়ে উঠলাম—মন থেকে যোগের প্রভাবও কেটে যেতে লাগল।

ভাবলে আশ্চর্য হয়ে যেতে হয় মাঝে মাঝে মনের বিশেষ কোনো দুর্বল মুহুর্তে তুচ্ছতম ঘটনাও আমাদের জীবনকে কী ভাবে,

৬(৪৪)
৮১