পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রভাবান্বিত করে। কলকাতায় আমাদের বাড়ির সামনে প্রতিদিনই একটি বুড়ি ভিক্ষা করতে বসত। বাড়িতে ঢুকতে বা বাড়ি থেকে বেরোতে সর্বদাই ভিখিরীটি চোখে পড়ত। পরনে শতচ্ছিন্ন বস্ত্র, সেই বৃদ্ধার বেদনাক্লিষ্ট চেহারাটা যতবারই দেখতাম, যতবারই ওর কথা ভাবতাম বেদনায় আমার মন ভরে যেত। ওর অবস্থার সঙ্গে তুলনা করে দেখে নিজেকে কেমন যেন দোষী দোষী মনে হত। মনে প্রশ্ন জাগত—আমি তিনতলা বাড়িতে বসে আরামে দিন কাটাচ্ছি, আর এই বেচারীর না আছে খাওয়াপরার সংস্থান, না আছে মাথা গোঁজবার ঠাঁই—এ কি অবিচার নয়? জগতে যদি দুঃখদারিদ্র্য নাই ঘুচল, তবে যোগের সাথকতা কি? এইসব কথা ভাবলে সমাজব্যবস্থার বির‍ুদ্ধে। মন বিদ্রোহ করে উঠত। কিন্তু আমি কিই বা করতে পারতাম? সমাজব্যবস্থা বদলানো তো একদিনের কর্ম নয়। যাই হোক, যতদিন তা না হচ্ছে, এই দুঃখিনীর একটা উপায় করা দরকার। কলেজে যাতায়াতের জন্য ট্রামভাড়া বাবদ আমি যে পয়সা পেতাম, ঠিক করলাম এবার থেকে সেই পয়সা জমিয়ে গরিব দুঃখীদের দান করব। বাড়ি থেকে কলেজ প্রায় তিন মাইল দূর—প্রায়ই হেঁটে বাড়ি ফিরতাম, হাতে সময় থাকলে কখনো কখনো যেতামও হেঁটে। এতে বিবেকের দংশন থেকে খানিকটা মুক্তি পেয়েছিলাম।

কলেজে প্রথম বছর ছুটিতে বাবা-মার কাছে কটকে ফিরে গেলাম। এবার আর আমার পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করতে কোনো বাধা দিলেন না বাবা-মা, কারণ আমার কলকাতার কার্যকলাপের কথা তাঁদের অজানা ছিল না। কটকে থাকতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যথেষ্ট ঘুরে বেড়িয়েছি, কিন্তু রাত্রিবেলা বাড়ি ফিরিনি, এমন কখনো হয়নি।

৮২