পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম এই তরুণ সন্ন্যাসী কী ভাবে পার্থিব ভোগসুখের আকাঙ্ক্ষা এবং শীতগ্রীষ্মানুভূতি সম্পূর্ণ জয় করেছেন। দুপুরবেলা প্রচণ্ড রোদ্দুরের মধ্যে তিনি পঞ্চাগ্নি জ্বালিয়ে তার মাঝখানে বসে ধ্যান করতেন। রাত্রিবেলা নাকি অনেক সময়ে তাঁর গায়ের উপর দিয়ে সাপ চলে যেত, কিন্তু তাতে তাঁর নিদ্রার ব্যাঘাত হত না। তাঁর নির্মল চরিত্র এবং স্নেহশীলতা সকলেরই শ্রদ্ধা আকর্ষণ করেছিল। তিনি কখনো কারুর কাছে কিছু চাইতেন না, লোকেরা নিজের থেকেই দলে দলে এসে তাঁকে খাদ্য দিয়ে যেত। ঠিক যতটুকু তাঁর প্রয়োজন তার বেশি তিনি কখনো গ্রহণ করতেন না। তাঁর দর্শনপ্রার্থীদের মধ্যে সি. আই. ডির লোকও ছিল—তারা অনুসন্ধান করত সন্ন্যাসী বাস্তবিকই নিরীহ কি না। তিনি যদি আর একটু মননশীল হতেন তবে সারাজীবনের জন্যই হয়তো আমি তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করতাম। এই তরুণ তপস্বীর সংস্পর্শে আসবার পর থেকে আমার মনে কোনো গুরুর কাছে দীক্ষা নেবার আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়ে উঠল। ১৯১৪ সালে গ্রীষ্মের ছুটিতে আমার বন্ধু হরিপদ চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে গ‍ুর‍ুর সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। রাস্তায় খরচের জন্য এক সহপাঠীর কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিলাম। বন্ধুটি তার স্কলারশিপের টাকা থেকে আমাকে ধার দিয়েছিল, আমিও পরে আমার স্কলারশিপ থেকেই এই ধার শোধ দিই। বলা বাহুল্য, বেরিয়েছিলাম বাড়িতে কাউকে না জানিয়েই, পরে পোস্টকার্ডে দু লাইন লিখে খবরটা দিয়েছিলাম। লমছমনঝোলা, হৃষীকেশ, হরিদ্ধা, মথুরা, বৃন্দাবন, বারাণসী, গয়া প্রভৃতি উত্তর ভারতের উল্লেখযোগ্য প্রায় সব কটি তীর্থেই আমরা গিয়ে ছিলাম। হরিদ্বারে আমাদের আর একটি বন্ধু এসে দলে ভিড়ে পড়ল।

৮৫